Elephant Attacks

পর পর মৃত্যু, ক্ষতিপূরণেই কি দায়িত্ব শেষ!

৩৪ ঘণ্টার মধ্যে ঝাড়গ্রাম জেলায় হাতির হানায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নয়াগ্রাম ব্লকের চাঁদাবিলা রেঞ্জে ফের একজন জখম হয়েছেন হাতির হানায়। পরপর এমন ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে জেলায়।

Advertisement

রঞ্জন পাল

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৩ ০৭:৪৫
Share:

চলতি আর্থিক বছরে ঝাড়গ্রাম ও খড়্গপুর ডিভিশন মিলিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলায় হাতির হানায় মোট ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতীকী চিত্র।

হাতির হানা চলছেই।

Advertisement

৩৪ ঘণ্টার মধ্যে ঝাড়গ্রাম জেলায় হাতির হানায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে নয়াগ্রাম ব্লকের চাঁদাবিলা রেঞ্জে ফের একজন জখম হয়েছেন হাতির হানায়। পরপর এমন ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে জেলায়। উচ্চ মাধ্যমিক চলাকালীন এই ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে পরীক্ষার্থীদেরও।

বন দফতর সূত্রে খবর, চলতি আর্থিক বছরে ঝাড়গ্রাম ও খড়্গপুর ডিভিশন মিলিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলায় হাতির হানায় মোট ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ঝাড়গ্রাম ডিভিশনেই মারা গিয়েছেন ২৪ জন। বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার দুপুরে নয়াগ্রাম রেঞ্জের সাননিগুই জঙ্গলে দময়ন্তী মাহাতো নামে এক মহিলার হাতির হানায় মৃত্যু হয়। সোমবার রাতে সাঁকরাইলের চুনপাড়া এলাকায় কাজ সেরে মোটর বাইকে বাড়ি ফেরার পথে হাতির হানায় মারা যান সুজিত মাহাতো নামে এক যুবক। ওই রাতেই ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের মানিকপাড়া রেঞ্জের বালিয়া গ্রামে ঢুকে পড়ে বাড়ি ভাঙে হাতির দল। সেই সময়ে নমিতা মাহাতো নামে এক মহিলা বাড়ি থেকে বেরোতে গেলে হাতির মুখে পড়েন। তাঁরও মৃত্যু হয়। সোমবার গভীর রাতে ঝাড়গ্রাম ব্লকের বেলতলা এলাকায় বাসস্ট্যান্ডে একটি খাবারের দোকানেও তাণ্ডব চালায় হাতি। মঙ্গলবার সকালেও ফের অঘটন। এদিন চাঁদাবিলা জঙ্গলে ছাগল চরাতে গিয়ে দলছুট হাতির সামনে পড়ে যান কার্তিক রানা নামে এক ব্যক্তি। গুরুতর জখম অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি রয়েছেন তিনি।

Advertisement

বন দফতর সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম জেলায় ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুর ও মেদিনীপুর ডিভিশনের এলাকা রয়েছে। গত বছর ঝাড়গ্রাম শহরে হাতি ঢুকে হামলা চালিয়েছিল। বেনাগেড়িয়া ও শহর লাগোয়া কন্যাডোবায় হাতির হানায় এক মহিলা-সহ চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। তারপরে হাতির দল ঝাড়গ্রাম ডিভিশন থেকে সরে বেশিরভাগ সময়ে খড়্গপুর ডিভিশনে থাকছে। খড়্গপুর ডিভিশনের নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় আখ খেত ও আনাজ চাষ হয়। এছাড়াও গভীর জঙ্গল রয়েছে। যারফলে হাতিও এলাকা ছাড়তে চাইছে না। খাবারের সন্ধানে এলাকায় ঢুকছে তারা। গত ৩৪ ঘণ্টায় যে তিনটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে দু’টোই খড়্গপুর ডিভিশনে (নয়াগ্রাম ও সাঁকরাইল)। বন দফতর সূত্রে খবর, গত কয়েক মাস ধরে খড়্গপুর ডিভিশনে কমেবেশি ৬০টি হাতির দল ছিল। চলতি মাসেও প্রতিদিন গড়ে ৩৫-৪০টি হাতির দল ওই ডিভিশনে রয়েছে। মঙ্গলবার পুরো ঝাড়গ্রাম জেলায় কম বেশি ৪০টি হাতি ছিল। হাতিগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় সমস্যা বাড়ছে।

মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) অশোকপ্রতাপ সিং ও ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বাবুলাল মাহাতো সোমবার রাতে হাতির মৃত দু’জনের পরিবারের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন। খড়্গপুরের ডিএফও শিবানন্দ রাম বলেন, ‘‘অধিকাংশ মৃত্যু হচ্ছে দলছুট হাতির জন্য। আমাদের ডিভিশনে হাতির হানায় যে দু’জন মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।’’

হাতির হানা বাড়তে থাকায় সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম শহর লাগোয়া বাঁদরভোলা বিট এলাকায় সাড়ে ১২ কিমি সৌর বিদ্যুৎ চালিত ফেন্সিং দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঝাড়গ্রাম শহর লাগোয়া সাড়ে চার কিমি এলাকায় পরিখাও খননের কথাও বলা হয়েছে। বন দফতর সূত্রে খবর, এতে সব মিলিয়ে ৭০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। কিন্তু হাতির হানায় যে এলাকায় সমস্যা বেশি হচ্ছে, মানুষের মৃত্যু হচ্ছে সেখানে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই বলছেন, শুধু পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণেই কি সব হয়ে যায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন