ক্ষতিপূরণ চেক বিলির দিন বদল ঘিরে বিতর্ক

তৃণমূলের দুই নেতার দ্বন্দ্বের জেরে দুর্ঘটনায় জখমদের ক্ষতিপূরণের চেক বিলির অনুষ্ঠান একদিন পিছিয়ে দিতে বাধ্য হল নয়াগ্রাম ব্লক প্রশাসন। প্রথমে ঠিক ছিল, রবিবার নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত ১৬ জন আহতের নামে বরাদ্দ টাকার চেক বিলি করবেন।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৬ ০০:৫৩
Share:

চেক তুলে দিচ্ছেন নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু। পাশে উজ্জ্বল দত্ত। —নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূলের দুই নেতার দ্বন্দ্বের জেরে দুর্ঘটনায় জখমদের ক্ষতিপূরণের চেক বিলির অনুষ্ঠান একদিন পিছিয়ে দিতে বাধ্য হল নয়াগ্রাম ব্লক প্রশাসন। প্রথমে ঠিক ছিল, রবিবার নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত ১৬ জন আহতের নামে বরাদ্দ টাকার চেক বিলি করবেন। কিন্তু হঠাত্‌ করে কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়ে সোমবার দুপুরে ক্ষতিপূরণের চেক বিলি করা হল। ওই কর্মসূচিতে উজ্জ্বলবাবুর সঙ্গে হাজির ছিলেন নয়াগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক দুলাল মুর্মু-ও।

Advertisement

জানা গিয়েছে, দুলালবাবুকে আগাম না জানিয়েই রবিবারের কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছিল। ঘটনাটি জেনে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন দুলালবাবু। প্রসঙ্গত, নয়াগ্রাম ব্লকে উন্নয়নের ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে উজ্জ্বলবাবু ও দুলালবাবুর মধ্যে মন কষাকষি চলছে। নানা প্রশ্নে দুই জনপ্রতিনিধির মধ্যে দূরত্বও বাড়ছে। এরই মধ্যে রবিবার সকালে নয়াগ্রামের বিডিও’কে ফোন করে দুলালবাবু জানিয়ে দেন, তাঁকে ও গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক (তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি) চূড়ামণি মাহাতোকে বাদ দিয়ে চেক বিলি করা যাবে না। কারণ, দুই বিধায়কের অনুরোধেই মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণের টাকা বরাদ্দ করেছেন। এরপরই রবিবার চেক বিলির কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত।

সোমবার দুপুরে নয়াগ্রাম ব্লক অফিসে এক অনুষ্ঠানে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন উজ্জ্বলবাবু ও দুলালবাবু। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ক্ষতিপূরণের টাকা কোন্ নেতার তত্‌পরতায় এসেছে তা নিয়ে উজ্জ্বলবাবু এবং দুলালবাবুর গোষ্ঠীর মধ্যে চাপান উতোর শুরু হয়েছে। বিতর্ক এড়াতে এ দিন আমন্ত্রণ পেয়েও চেক বিলির অনুষ্ঠানে যাননি গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো। চূড়ামণিবাবু অবশ্য বলেন, “দলের কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য নয়াগ্রামে চেক বিলির কর্মসূচিতে যেতে পারিনি।” বিডিও বিজয় সরকারও এ দিন চেক বিলি অনুষ্ঠানে ছিলেন না। ফোনে ধরা হলে বিডিও বলেন, “নির্বাচনী প্রশিক্ষণের কাজে মেদিনীপুরে এসেছি।”

Advertisement

নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মুর দাবি, “গত শুক্রবার বিধানসভায় চূড়ামণিবাবু ও আমি মুখ্যমন্ত্রীকে জখমদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসককে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন।” রবিবারের কর্মসূচি পিছিয়ে দিলেন কেন? দুলালবাবুর জবাব, “সংবাদপত্র পড়ে জানতে পারি, রবিবার চেক বিলির কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে। কাজের দিনেই সরকারি চেক বিলি হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।” তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত-র অবশ্য সতর্ক মন্তব্য, “প্রথমে ঠিক ছিল রবিবার চেক বিলি হবে। আমরাই সেটা একদিন পিছিয়ে সোমবার কাজের দিনে চেক বিলি করলাম।” উজ্জ্বলবাবুর আরও দাবি, ১১ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর সভার দিনেই নয়াগ্রাম ব্লক নেতৃত্বের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জখমদের সাহায্যের আর্জি জানানো হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি নয়াগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিকসভায় যাওয়ার সময় বেড়াজাল এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান উল্টে গিয়ে জখম হন ৪০ জন। জখম হন ১৬ জন। ঘটনার পরে আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে প্রাথমিক চিকিত্‌সাটুকুরও ব্যবস্থা ছিল না। এই নিয়ে সেদিন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। জখমদের পরিজনদের মধ্যে বিস্তর অসন্তোষও দেখা দেয়। ওই দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছেন মৃন্ময় মাহাতো। মৃন্ময় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন।

ঘটনাটি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, “ভোটের আগে নাম কেনার জন্য শাসক দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ইঁদুর দৌড় শুরু হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন