কেশিয়াড়ির খুনে অধরা দুষ্কৃতী

দলের লোকই জড়িত, দাবি নিহতের স্ত্রীর

তৃণমূল নেতার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় দলীয় যোগের অভিযোগ তুললেন মৃতের স্ত্রী রুনা সাঁতরা। বুধবার সকালে কেশিয়াড়ির ভসরার কাছে রাস্তার ধারে মৃত্যুঞ্জয় সাঁতরা নামে ওই তৃণমূল নেতার দেহ উদ্ধার হয়। মঙ্গলবার রাতে একটি স্কুলের পরিচালন সমিতির বৈঠক সেরে বাইকে বেরোলেও আর বাড়ি ফেরেননি তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৭
Share:

তৃণমূল নেতার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় দলীয় যোগের অভিযোগ তুললেন মৃতের স্ত্রী রুনা সাঁতরা। বুধবার সকালে কেশিয়াড়ির ভসরার কাছে রাস্তার ধারে মৃত্যুঞ্জয় সাঁতরা নামে ওই তৃণমূল নেতার দেহ উদ্ধার হয়। মঙ্গলবার রাতে একটি স্কুলের পরিচালন সমিতির বৈঠক সেরে বাইকে বেরোলেও আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। ঘটনায় রুনাদেবীর অভিযোগ করছেন, “বৈঠক চলাকালীন ফোনে আমার স্বামীর সঙ্গে কারও ঝগড়া হয়েছিল বলে শুনেছি। ও আমাকে কিছু বলত না। তবে বিজেপি নয়, আমাদের পার্টির লোকেরা ওকে খুন করেছে।”

Advertisement

ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পরই পুলিশ জানিয়েছিল, মৃত্যুঞ্জয়বাবুকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতদেহের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও জানা গিয়েছে, মৃত্যুঞ্জয়বাবুকে মাথার পিছনে লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। তাঁর মুখেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। ভসরা এলাকায় মৃতদেহের পাশ থেকে একটি তির ধনুক উদ্ধার হলেও ঘটনার মোড় ঘোরাতে তা সাজানো হয়েছিল বলে দাবি পুলিশের। খুনের পর মৃত্যুঞ্জয়বাবুর দেহ ভসরা এলাকায় কেউ ফেলে গিয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করছে পুলিশ।

যদিও ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা দাবি করেন, ‘‘খুনের তদন্তে আমরা অনেকটা এগিয়েছি। আপাতত প্রাথমিক তদন্তে যেটুকু বোঝা গিয়েছে, অন্যত্র খুন করে ভসরা এলাকায় দেহ ফেলে রাখা হয়েছিল। পরিচিত কেউ যারা মৃত্যুঞ্জয় সাঁতরার গতিবিধি জানত তারাই এই কাজে যুক্ত বলে মনে হচ্ছে।”

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেশিয়াড়ির নছিপুর এলাকায় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির পদ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে আগে থেকেই। তৃণমূলের কিসান খেত মজদুর সংগঠনের মহকুমার সভাপতি ফটিক পাহাড়ির অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন ডাডরা গ্রামের বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয়বাবু। ফটিকের দাবি, মৃত্যুঞ্জয়বাবুই নছিপুর অঞ্চলের সভাপতি ছিলেন। যদিও ফটিক বিরোধী হিসেবে এলাকায় পরিচিত তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জগদীশ দাসের দাবি, মৃত্যুঞ্জয়বাবু দলের অঞ্চল সভাপতি নন। বুধবার শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর নেতারাই ঘটনায় বিজেপি-র দিকে আঙুল তোলে।

বৃহস্পতিবারও তৃণমূল নেতা ফটিকবাবু বলেন, “এটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক খুন। এর সঙ্গে বিজেপি, সিপিএম বা আমাদের দলছুটরাও থাকতে পারে।’’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা চাই না নির্দোষ কেউ শাস্তি পাক। পুলিশ সঠিক তদন্ত করে দেখুক।”

বুধবার রাতে নছিপুরের ডাডরা গ্রামেই মৃত্যুঞ্জয়বাবুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মৃত্যুঞ্জয়বাবুর দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে একাদশ শ্রেণির ছাত্র কিডনির রোগে আক্রান্ত। প্রতি তিনমাস অন্তর কটকে তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয়। এ বার এই বিপুল খরচ কী ভাবে সামলানো হবে তা ভেবে মাথায় হাত মৃতের স্ত্রী রুনাদেবীর। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “আমি ছোট এই দুই ছেলেকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব জানি না। আমার বড় ছেলের কোনও চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি।’’ তাঁর আরও দাবি, তাঁর স্বামীকে যারা খুন করেছে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন