প্রাথমিকে খারাপ পোশাক বিলির নালিশ ডেবরায়

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরও স্বনির্ভর দলের মাধ্যমে প্রাথমিকের দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের পোশাক বিলি করা হয়। কোন স্বনির্ভর দল এই দায়িত্ব পালন করবে, তা ঠিক করে দিয়েছিল ব্লক প্রশাসনই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ০১:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

পড়ুয়াদের নিম্নমানের পোশাক সরবরাহের অভিযোগে পোশাক বিলি বন্ধ করল বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুল। মঙ্গলবার ডেবরা ব্লক অফিসে ওই স্কুলগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেন বিডিও। বৈঠকে অবশ্য কোনও রফাসূত্র মেলেনি। ওই সমস্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, নিম্নমানের পোশাক বিলি করায় অভিভাবকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। ব্লক প্রশাসনের পরিবর্তে ‘ভিলেজ এডুকেশন কমিটি’-র মাধ্যমে পোশাক কেনার ব্যবস্থা করার দাবিও তুলেছে স্কুলগুলি।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরও স্বনির্ভর দলের মাধ্যমে প্রাথমিকের দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের পোশাক বিলি করা হয়। কোন স্বনির্ভর দল এই দায়িত্ব পালন করবে, তা ঠিক করে দিয়েছিল ব্লক প্রশাসনই। তাই গত বছরও পোশাকের মান নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগের মুখে পরে পরে শিশু শ্রেণি ও প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য পোশাক সরবরাহ করে
ব্লক প্রশাসন।

এ বছর আগেই ব্লক প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, শিশু শ্রেণি ও প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াদের পোশাক দেওয়া হবে না। পোশাক পাবে দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা। সেই নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। এরপরে ফের নিম্নমানের পোশাক বিলির অভিযোগ ওঠায় ক্ষোভ বেড়েছে।

Advertisement

স্কুল শিক্ষকদের অভিযোগ, দু’টি পোশাকের জন্য ব্লক থেকে পড়ুয়া পিছু চারশো টাকা ধার্য। যদিও এর থেকে কম মূল্যের পোশাক সরবরাহ করছে স্বনির্ভর দলগুলি। এই পরিস্থিতিতে খোদ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে স্কুলগুলিকে পোশাক বিলি করতে নিষেধ করা হয়েছে। ব্লক প্রশাসনের চাপে অবশ্য অনেকে পোশাক বিলি করতে বাধ্য হয়েছেন।

ডেবরার পশং জুনিয়র বেসিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সরোজকুমার মাইতি বলেন, “পড়ুয়াদের বিলি করা পোশাকের মান ভাল নয়। গত বছরও পোশাক ভাল না থাকার অভিযোগ ওঠার পরে শিশুশ্রেণি ও প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াদের পোশাক দেওয়া হয়েছিল। এ বছর সেটাও দেওয়া হল না।” একইভাবে, ডেবরার অর্জুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপ শেখর-ও বলছেন, “আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে পোশাক বিলি করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই আমরা পোশাক বিলি করছি না। কারণ এ ভাবে পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ টাকা নয়ছয় হতে দেওয়া যায় না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘নিম্নমানের পোশাক বিলি করা হচ্ছে। বৈঠকে ‘ভিলেজ এডুকেশন কমি’-র মাধ্যমে পোশাক কেনার ব্যবস্থার কথা জানিয়েছি।” অবশ্য এতকিছুর পরেও ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ চিন্ময় বসু বলছেন, “বেশ কয়েকটি জায়গায় নিম্নমানের পোশাক বিলির অভিযোগ ওঠার আমি গিয়েছিলাম। পোশাক নিম্নমানের বলে আমার
মনে হয়নি।”

যে সমস্ত স্কুল এখনও পোশাক বিলি করেনি তাঁদের নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠক করেন বিডিও। বৈঠকে আসা স্কুলের প্রতিনিধিরা পোশাক বিলি করতে রাজি না হওয়ায় কোনও রফাসূত্র মেলেনি। তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির লোয়াদা চক্রের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত ভৌমিক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর দলগুলির সমৃদ্ধি চাইছেন। আমাদের তাতে কোনও আপত্তি নেই।’’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘পড়ুয়াদের পোশাকের জন্য ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন পোশাক বিক্রেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে স্বনির্ভর দলগুলি নিম্নমানের পোশাক এনে সরবরাহ করছে। আমরা এর বিরোধী। স্কুলগুলিতে ওই পোশাক বিলি করা যাবে না বলে আন্দোলন করছি।”

এ নিয়ে ডেবরার বিডিও ললিতবাবু বলছেন, “পোশাক বিলি করতে হবে বলে স্কুলগুলিকে জানিয়েছি। নিম্নমানের পোশাক কোথাও দেওয়া হলে অভিযোগ জানানোর কথাও বলা হয়েছে।” নিম্নমানের পোশাক কোনওভাবেই বিলি করা যাবে না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নারায়ণ সাঁতরা-ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন