খড়্গপুর কলেজে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগকে কেন্দ্র করে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে।
বিরোধীদের অভিযোগ, নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। স্থানীয় একটি ছোট পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দায় সেরেছেন কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, কলেজে ইন্টারভিউ বোর্ডে তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী-সহ দুই নেতা থাকায় দলের ‘ঘনিষ্ঠ’ ৩০ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। এ সব করা হয়েছে মাত্র দু’দিনের মধ্যে। এমনকী তৃণমূলের বাইরে থাকা সফল কর্মপ্রার্থীদের সঙ্গে টাকার রফা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।
খড়্গপুর কলেজে বিভিন্ন অস্থায়ী পদে কর্মীদের নিয়োগের জন্য শনিবার ছিল ইন্টারভিউ। রবিবার কলেজ বন্ধ ছিল। সোমবারই তড়িঘড়ি পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে বিলি করা হয় নিয়োগপত্র। মঙ্গলবার কলেজে যোগও দিয়েছেন অনেকে। বিরোধীদের দাবি, নিয়োগপত্র কাদের দেওয়া হবে তা আগেই প্রস্তুত থাকায় খুব কম সময়ে প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ১৪৩ জন ইন্টারভিউ দিলেও সফল ৩৮ জনের ৩০ জনই প্রত্যক্ষ ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত।
যদিও কলেজের টিচার-ইন-চার্জ কৌশিককুমার ঘোষ বলেন, “অনিয়ম হয়নি। কাগজে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১৪৩ জন প্রার্থীর ইন্টারভিউ নিয়ে নিয়োগ হয়েছে। সকলেই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। সফল কর্মপ্রার্থীদের কারা কোন রাজনৈতিক দলের লোক তা বলা যাবে না।”
কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করতে গেলে বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। এক্ষেত্রে খড়্গপুরের স্থানীয় একটি কাগজে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিসবাবু ওই পত্রিকার সম্পাদক হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। ২৬ নভেম্বর ইন্টারভিউ হয়। ইন্টারভিউ বোর্ডে কলেজের টিচার-ইনচার্জ, এক অধ্যাপক, দু’জন কর্মী ছাড়াও হাজির ছিলেন তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীও। শাসক দলের এক জেলা নেতাও ছিলেন।
স্বজনপোষণের নালিশ ওঠায় সরব বিরোধীরা। খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বাংলা জুড়ে তৃণমূলের হস্তক্ষেপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বজনপোষণ চলছে। তৃণমূল নেতার পত্রিকায় নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হল। আবার কী ভাবে তাঁকেই ইন্টারভিউ বোর্ডে রেখে নিয়োগ হল, সেই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আন্দোলনে নামব।”
সিপিএমের শহর জোনাল কমিটি সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “তৃণমূল দলবাজি করছে তা কলেজের নিয়োগ করার ঘটনায় প্রমাণিত।” কংগ্রেসের শহর সভাপতি অমল দাস বলেন, “স্বজনপোষণ হয়েছে। যোগ্য কর্মপ্রার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।”
কলেজ পরিচালন সভাপতি তথা তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “নিয়ম মেনে ৩৮ জন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ হয়েছে।” তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘বেকার যুবক-যুবতী চাকরি পাওয়ায় আমি খুশি। সব নিয়ম মেনে হয়েছে।’’ আর নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া তৃণমূল কর্মীদের কথায় , “এক সময়ে বামেরা নিজেদের লোকেদের চাকরির সুযোগ করে দিয়েছে। এখন আমরা সে সুযোগ পেয়েছি। যদি কিছু বাড়তি সুযোগ পেয়েই থাকি অসুবিধা কোথায়?”