বাঁধে ভারী গাড়ি চললেই হবে মামলা

ঘাটালের প্রতাপপুরে নদী বাঁধ পরিদর্শনে এসে বেআইনি নির্মাণ সরানোর কথা আগেই বলেছিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁধ পরিদর্শনের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দলও পাঠান তিনি। সম্প্রতি সেচ দফতরের পযবের্ক্ষণ ও পরিকল্পনা বিভাগের আধিকারিকরা ঘাটালে এসে নদীবাঁধগুলি ঘুরেও দেখেন।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০১:২৩
Share:

বানভাসি ঘাটাল। ফাইল চিত্র।

কোথাও বাঁধের উপরেই গজিয়ে উঠেছে বেআইনি নির্মাণ, আবার কোথাও বাঁধের উপরের রাস্তা দিয়েই চলছে ভারী যানবাহন। ফলে দিনে দিনে দুর্বল হচ্ছে বাঁধের মাটি। তার জেরে বর্ষা এলেই জলের তোড়ে ভাঙছে বাঁধ। বানভাসি হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বাঁধের উপর ভারী যান চললেই এ বার মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

ঘাটালের প্রতাপপুরে নদী বাঁধ পরিদর্শনে এসে বেআইনি নির্মাণ সরানোর কথা আগেই বলেছিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁধ পরিদর্শনের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দলও পাঠান তিনি। সম্প্রতি সেচ দফতরের পযবের্ক্ষণ ও পরিকল্পনা বিভাগের আধিকারিকরা ঘাটালে এসে নদীবাঁধগুলি ঘুরেও দেখেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দফতরেরই এক শীর্ষ কর্তার সাফ বক্তব্য, “নদী বাঁধ গুলি রক্ষা করতে হলে এখনই বেআইনি নির্মাণ সরিয়ে দিতে হবে। তা না হলে সংস্কার করার পরেও বাঁধ বেশিদিন স্থায়ী হবে না।”

সেচ দফতর সূত্রে খবর, ঘাটালে মহকুমায় তিনটি সার্কিট নিয়ে মোট ১৫৩ কিলোমিটার নদী বাঁধ রয়েছে। বরাবরই বাঁধের পশ্চিম অংশ নদীর জলে প্লাবিত হয়। বাঁধ থাকার ফলেই জলমগ্ন হওয়ার থেকে রক্ষা পায় ঘাটালের বাকি অংশ। একের পর এক বেআইনি নির্মাণের জেরে আলগা হয়ে যাচ্ছে বাঁধের মাটি। সেচ দফতরের তথ্যই বলছে, নদী বাঁধের সত্তর ভাগ অংশেই অসংখ্য ঘরবাড়ি-দোকান ঘর তৈরি হয়েছে। সরকারি জমির উপরই হচ্ছে সব্জি চাষও। ফলে বাঁধের ঠিকঠাক নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকী নির্মাণের সময় বাঁধেই বড় বড় গর্তও করা হয়। ফলে বাঁধে তৈরি হয় ফাটলও। বর্ষার সময় নদীগুলিতে জলের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ফাটল দিয়েই জল গড়াতে শুরু করে। তখন সাময়িক ভাবে বালি ও মাটির বস্তা দিয়ে জল আটকানো হয়।

Advertisement

ঘাটালের বাসিন্দাদের দাবি, “বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাস্টার প্ল্যান কবে হবে ঠিক নেই। তাই এখন বাঁধটুকু অন্তত বাঁচানোর ব্যবস্থা করুক সরকার।” ঘাটালে বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের আশ্বাস, “নতুন করে যাতে আর নদী বাঁধে বাড়ি তৈরি না হয় সে জন্য আমরা উদ্যোগী হয়েছি। পাশাপাশি বেআইনি নির্মাণ নিয়েও ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।”

বাঁধের উপর বাড়ি তৈরির রেওয়াজ এই প্রথম নয়। বাম আমলেও নেতাদের একাংশ ও প্রশাসনের প্রশ্রয়ে এমন বহু অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। সেই ট্রাডিশন এখনও চলছে। শুধু একতলা বাড়ি নয়, নিয়মের তোয়াক্কা ‌না করেই বাঁধে বহুতল বাড়িও গজিয়ে উঠেছে। এ ছাড়াও বাঁধের উপরেই ফেলা হচ্ছে ইমারতি সরঞ্জামও। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, সরকারি জমির উপর বাড়ি তৈরির অনুমোদন মিলছে কী করে। কেনই বা পুরসভা ও পঞ্চায়েত বেআইনি নির্মাণগুলি নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মহকুমা সেচ আধিকারিক উত্তম হাজরা বলছেন, “বাঁধের উপর বেআইনি দখলদারদের সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাঁধের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করলেই এ বার মামলা করা হবে।”

আদতে বাঁধ রক্ষায় কতটা তৎপর হয় প্রশাসন, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন