দাঁড়ি পড়ছে না রাজনৈতিক সংঘর্ষে
Bhagwanpur

দুরুদুরু বুকেই প্রস্তুতি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের

ভগবানপুরেই বেশ কিছু এলাকায় মাস খানেক ধরে প্রায়ই রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৪৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

২০১৯ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের মহম্মদপুর হাইস্কুলের ছাত্র সৌগত দাস। উচ্চমাধ্যমিকেো রাজ্যে দ্বিতীয় হয়েছিলেন ভগবানপুরেরবা জকুল বলাইচাঁদ বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের ছাত্র তন্ময় মেইকাপ। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারেও সার্বিকভাবে রাজ্যে শীর্ষস্থান দখলে রেখেছিল এই জেলা।

Advertisement

কিন্তু সেই ভগবানপুরেই বেশ কিছু এলাকায় মাস খানেক ধরে প্রায়ই রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আতঙ্কের পরিবেশেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।একইভাবে ময়নার বাকচা, খেজুরির বীরবন্দর ও আলাইচক এলাকার বহু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীও রীতিমত ভয়ভীতির মধ্যেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক থেকে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষের জেরে বাকচা পঞ্চায়েতের গোড়ামহল, বরুণা, খিদিরপুর ও বাকচা প্রভৃতি গ্রামের পরিস্থিতি থমথমে। প্রায় এক বছর ধরেই এম অবস্থা।

গত ১৪ অক্টোবর বাকচার আন্ধারিয়া গ্রামের রাস্তায় দিনদুপুরে তৃণমূল নেতা বসুদেব মণ্ডলকে কুপিয়ে খুনের ঘটনার পর বাসিন্দাদের আতঙ্ক আরও বেড়েছে। পাশাপাশি দু’পক্ষের সংঘর্ষে মাঝেমধ্যেই উত্তপত হয়ে উঠছে এালাকা। যার জেরে সাধারণ মানুষ ও স্কুলপড়ুয়া সকলেই আতঙ্ক নিয়ে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করছেন বলে অভিযোগ। এমনকী সন্ধ্যার পর অনেকে ছেলেমেয়েদের টিউশনে পাঠাচ্ছেন না। ফলে সমস্যায় পড়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। বাকচা, গোড়ামহল, বরুণা ও খিদিরপুর গ্রামে সন্ধ্যা হলেই বোমাবাজির আশঙ্কায় তাঁরা তটস্থ বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এলাকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অনেকে বাকচা, মির্জানগর, আড়ংকিয়ারানা হাইস্কুলের পড়ুয়া। সেখানকার শিক্ষকেরা জানান, পরীক্ষার জন্য পড়ুয়াদের অনেকে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত টিউশন পড়েন। কিন্তু কয়েক মাস ধরে এলাকায় যে রাজনৈতিক অশান্তির শুরু হয়েছে তাতে পড়ুয়াদের অনেকে ভয়ে টিউশন পড়তে আসছে না। গোড়ামহল গ্রামের এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর কথায়, ‘‘আগে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে গৃহশিক্ষকের কাছে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পড়ে বাড়ি ফিরতাম। আমার সঙ্গে আরও ১৫ জন পড়ত। কিন্তু গত পয়লা জানুয়ারি গ্রামে বোমাবাজি ও ব্যাপক গোলমালের পর সন্ধ্যার পর আর পড়তে যেতে সাহস হয় না। সামনেই পরীক্ষা। অসুবি‌ধা তো হচ্ছেই।’’

Advertisement

বাকচার মির্জানগর আড়ংকিয়ারানা যজ্ঞেশ্বর বিদ্যাপীঠে মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘এখানে বাকচা, গোড়ামহল, বরুণা গ্রামের অনেক পড়ুয়া রয়েছে। কিন্তু গোলমালের জন্য কিছু পড়ুয়া দূরে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সন্ধ্যার পর অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের টিউশনে পাঠানো প্রায় বন্ধ করেছেন। পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সমস্যা তো হচ্ছেই।’’

একই ছবি ভগবানপুর-১ ব্লকের মহম্মদপুর হাইস্কুল, মোবারকপুর, মনোহরপুর হাইস্কুলের মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একাংশের। বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে এলাকায় বোমাবাজি এবং সড়ক অবরোধের মতো ঘটনায় স্কুলে ও টিউশনে পড়তে যেতে পড়ুয়ারা ভয় পাচ্ছেন বলে অভিযোগ। মহম্মদপুর হাইস্কুলের পরিচালন কমিটির প্রাক্তন সদস্য তথা ভগবানপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ দেবোপম প্রধান বলেন, ‘‘এলাকায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগের।’’

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আমিনুল আহসান বলেন, ‘‘মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষ গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলার সমস্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকে তা সুনিশ্চিত করা হবে।’’ তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই সব এলাকায় পুলিশের টহলদারি রয়েছে। রয়েছে ক্যাম্পও। তারপরেও নিরাপত্তা নিয়ে কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন