তৃণমূল-বিজেপি চাপানউতোর তুঙ্গে
Oxygen

পশ্চিমে স্থগিত সব অক্সিজেন প্ল্যান্টই

বিভিন্ন মহল মনে করছে, কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতেই সার্বিকভাবে এ রাজ্যে প্রকল্পের সংখ্যা কমে গিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২১ ০৬:০১
Share:

মেদিনীপুর মেডিক্যালে অক্সিজেন প্ল্যান্টের পরিদর্শনের দিন। ফাইল চিত্র।

জেলার নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলিতে জায়গা দেখে রাখা হয়েছে। এসেছিল পরিদর্শক দলও। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরে আপাতত কোনও অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসছে না। কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় এই জেলার কোনও প্রকল্প নেই। পাশের জেলা ঝাড়গ্রামের অবশ্য প্রকল্প রয়েছে।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রস্তাবিত অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলি বসানোর কথা ছিল ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’- এর (ডিআরডিও)। কেন্দ্রীয় সংস্থার বার্তা পেয়ে হতাশ জেলার স্বাস্থ্য দফতরও। রাজ্যের সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তা সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী মানছেন, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুরে অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলি যে সংস্থার বসানোর কথা ছিল, তারা জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় এ জেলার কোনও প্রকল্প নেই। স্বাভাবিকভাবে এ জেলায় প্রস্তাবিত কোনও প্ল্যান্টের কাজই এগোয়নি।’’ জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘এই প্রকল্পগুলি কবে হবে, আদৌ হবে কি না, সে সব এখনই বলা মুশকিল।’’

এ নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। বিভিন্ন মহলও মনে করছে, কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতেই সার্বিকভাবে এ রাজ্যে প্রকল্পের সংখ্যা কমে গিয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির মতে, ‘‘আসলে এটা বিজেপির প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু নয়। বাংলার মানুষ যে ভাবে বিপুল ভোটে তৃণমূলকে জিতিয়েছেন, সেটা মেনে নিতে না পেরেই এই প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বিজেপি।’’ অভিযোগ মানতে নারাজ বিজেপি। বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন তিওয়ারি বলেন, ‘‘আমি যতটুকু জানি, প্রস্তাবিত প্রকল্প হবেই না, এমনটা নয়। কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা এমনটা জানায়নি। জানিয়েছে, আপাতত হচ্ছে না। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্প হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর কাজ শুরুও হয়েছে।’’ সৌমেন জুড়ছেন, ‘‘ঝাড়গ্রামে তো প্রকল্প হচ্ছে। ঝাড়গ্রামেও তো বিজেপির ফল খারাপ হয়েছে। তাহলে সেখানে কেন হচ্ছে? তৃণমূলের স্বভাব সবকিছুর সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে দেওয়া।’’

Advertisement

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে। সঙ্গে দুশ্চিন্তাও বেড়েছে। যে কোনও সময় অক্সিজেনের অভাব দেখা দিতে পারে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের ৫টি সরকারি হাসপাতালে মেডিক্যাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। ঠিক ছিল, জেলায় মোট ৬টি প্ল্যান্ট গড়ে হবে। প্রস্তাবিত প্ল্যান্টের জন্য হাসপাতালগুলি জায়গা দেখা হয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু মানছেন, ‘‘জায়গা দেখে রাখা হয়েছে। কিন্তু অক্সিজেন প্ল্যান্টের কাজ এগোয়নি।’’ এই প্ল্যান্টের পোশাকি নাম ‘প্রেশার সুইং অ্যাডসর্পশন’ সংক্ষেপে পিএসএ। এ ক্ষেত্রে বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ হয়। সংগৃহীত অক্সিজেন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বিশেষ ট্যাঙ্কে মজুত হয়। প্রয়োজন মতো সেখান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে হাসপাতালের ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহ হয়। ট্যাঙ্কে মজুত অক্সিজেন যত ব্যবহার হয়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা তৈরি হয়ে ভরে যেতে থাকে প্ল্যান্টের ভাঁড়ার। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে বাতাস থেকে সংগৃহীত অক্সিজেন প্রক্রিয়াকরণের পর ট্যাঙ্কে মজুত হয়।’’

তবে এখন প্ল্যান্ট হচ্ছে না। চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ-র মেদিনীপুর শাখার সভাপতি তারাপদ ঘোষ, সম্পাদক কৃপাসিন্ধু গাঁতাইত বলছেন, ‘‘প্ল্যান্টগুলি বসলে হাসপাতালগুলিও অক্সিজেনের ব্যাপারে অনেকটা স্বনির্ভর হতে পারত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন