বনকাকুরা এসে ওদের নিয়ে গেল না কেন

বনবিড়াল উদ্ধার করে প্রশ্ন পাঁচ খুদের

বন্যপ্রাণী রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে বন দফতরের তরফে স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বোঝানোর কাজ শুরু হয়। কী ভাবে চেনা যাবে বাঘরোল, বন বিড়াল। তাদের রক্ষায় কী উচিত সে সব সম্পর্কে পাঠও দেওয়া হচ্ছিল।

Advertisement

পার্থপ্রতিম দাস

তমলুক শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ১৫:০০
Share:

অপেক্ষায়: উদ্ধার দু’টি বন বিড়াল।

সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরে বেশ কয়েকটি জায়গায় বাঘরোলকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছিল জেলা বন দফতর। বন্যপ্রাণী রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে বন দফতরের তরফে স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বোঝানোর কাজ শুরু হয়। কী ভাবে চেনা যাবে বাঘরোল, বন বিড়াল। তাদের রক্ষায় কী উচিত সে সব সম্পর্কে পাঠও দেওয়া হচ্ছিল।

Advertisement

অথচ বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়ার সাহড়দা গ্রামে দু’টি বনবিড়াল উদ্ধারকে কেন্দ্র করে সেই বন দফতরের বিরুদ্ধেই উদাসীনতার অভিযোগ উঠল। তাদের এমন আচরণে অবাক বনবিড়াল দু’টির পাঁচ খুদে উদ্ধারকারী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় কুমরপুর ও সাহড়দা শিশুশিক্ষা নিকেতনের দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া ত্রিপর্ণা পতি এবং রোহিত সন্নিগ্রাহী দু’টি বন বিড়ালের বাচ্চাকে উদ্ধার করে। ত্রিপর্ণা বলে, “রাস্তার ধারে ঝোপে কান্নার আওয়াজ শুনে আমি আর রোহিত দৌড়ে গিয়ে দেখি, পিঁপড়েতে কামড়ে ধরেছে দুটো বন বিড়ালের বাচ্চাকে। ওদের গায়ে ছোপ ছোপ দাগ ছিল। স্কুলে বন্য প্রাণীদের বাঁচানোর কথা বলেন মাস্টারমশাইরা। কিন্তু কী ভাবে ওদের বাঁচাব বুঝতে না পেরে ডেকে আনি কৃষ্ণা, বর্ষণ আর সুমন। সবাই মিলে পিঁপড়ের হাত থেকে ওদের ছাড়িয়ে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি।’’

Advertisement

মেয়ের এমন কাণ্ড দেখে খুশিই হয়েছিলেন ত্রিপর্ণার বাবা, প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভাস্করব্রত পতি। বন বিড়ালের বাচ্চা দু’টি যাতে সুস্থ থাকে সে জন্য সঙ্গে সঙ্গে সাহায্যের জন্য ফোন করেন জেলার ডিএফও স্বাগতা দাসকে। তাঁর অভিযোগ, ডিএফও তাঁকে বলেন, ‘কিছু করা সম্ভব নয়। পারলে ডাক্তার দেখিয়ে জঙ্গলে ছেড়ে দিন’।

বন দফতরের লোকজন বনবিড়াল দু’টি নেবে না জেনে তাদের পরিচর্যায় নেমে পড়ে পাঁচ খুদে। গায়ে হাত বুলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ড্রপারে দুধও খাওয়ায়। কিন্তু কী ভাবে তাদের বাঁচানো যাবে সে প্রশ্নের কোনও উত্তর পাচ্ছিল না তারা। বনকাকুরা স্কুলে এসে যেখানে তাদের বন্যপ্রাণী বাঁচাতে বলেছে, সেখানে কেন তারা বাচ্চা দু’টোকে নিয়ে গেল না, শুক্রবার দিনভর সেটাই ছিল তাদের জিজ্ঞাসা।

এ ব্যাপারে জেলার ডিএফও স্বাগতা দাসকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সব জায়গায় গিয়ে এ ভাবে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। ওই বাচ্চাগুলোকে জঙ্গলে ছেড়ে দিলেই ওরা বাঁচবে।’’ বনকর্তার এমন মন্তব্যে আশ্চর্য হয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জ অনুমোদিত বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংস্থার (আইইউসিএন) বিড়াল বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য তিয়াসা আঢ্য। তিনি বলেন, ‘‘সংরক্ষণের নিরিখে ভারতীয় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে বন বিড়াল দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রাণী (তফসিল ২)। দেশের যে কোনও বন্যপ্রাণী তা সে জঙ্গলে হোক বা লোকালয়ের আশেপাশে, তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব বন দফতরের।’’ তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে পশু চিকিৎসককে দেখিয়ে বন বিড়ালের বাচ্চা দু’টিকে তাদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করাটা বন দফতরের কর্তব্য। এতে যারা তাদের উদ্ধার করেছে তারা এ ধরনের কাজে আরও বেশি উৎসাহ পাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন