ঠেক ভাঙলেন স্থানীয় মহিলারাই

সারে লাভ নেই, ভরসা তাই চোলাইয়ে!

রাস্তার উপর সারের দোকান। রীতিমতো কৃষি দফতরের অনুমোদনপ্রাপ্ত। ইউরিয়া, পটাশের পাশাপাশি সেখানে দেদার বিকোয় মদ। চোলাই মদ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

দাসপুর শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩৬
Share:

চোলাই তৈরির সরঞ্জাম হাতে মহিলারা।

রাস্তার উপর সারের দোকান। রীতিমতো কৃষি দফতরের অনুমোদনপ্রাপ্ত। ইউরিয়া, পটাশের পাশাপাশি সেখানে দেদার বিকোয় মদ। চোলাই মদ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা। রাস্তা দিয়ে যাওয়া মহিলাদের প্রতি কটূক্তির বন্যা বইয়ে দেয় মদ্যপেরা। বেশ কিছুদিন ধরেই এমন চলছিল দাসপুরের সেকেন্দারি গ্রামে। রবিবার রাতে প্রশাসনের উপর ভরসা না-রেখে নিজেরাও সেই দোকান গুঁড়িয়ে দিলেন স্থানীয় মহিলারা। দোকান মালিকের অবশ্য দাবি, সারের ব্যবসা ভাল চলছিল না, তাই চোলাই বিক্রি করতেন দোকানেই।

Advertisement

অভিযোগ, এর আগেও বহুবার ওই অবৈধ কারবার বন্ধ করার জন্য প্রশাসনকে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বন্ধ হওয়া দূর, কারবার ফুলে ফেঁপে উঠছিল প্রতিদিন। ওই সারের দোকানের সঙ্গে আশপাশের একাধিক চোলাইয়ের ঠেকও ভেঙে দেন স্থানীয়রা।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, কিছুদিন ধরে ওই সারের দোকানে চোলাই বিক্রি হচ্ছিল। ইদানীং মদ খাওয়ার ব্যবস্থাও চালু করেছিল দোকানি। সকাল থেকেই গভীর রাত চলত কারবার। ভিড়ও বাড়ছিল। কেউ প্রতিবাদ করলে হুমকিও জুটত ‘দেখে নেব’।

Advertisement

দাসপুর-১ ব্লকের নন্দনপুর-১ পঞ্চায়েতের সেকেন্দারি গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি সিংহ, গীতা হাজরা, পুতুল হাজরা, কল্পনা বাগেরা বলেন, এমনিতেই গ্রামে চোলাইয়ের ঠেক রয়েছে। নতুন করে সারের দোকানে মদ বিক্রি শুরু হয়েছিল। গ্রামে বাইরের লোকজনও ভিড় জমাচ্ছে। নিরাপত্তা নেই একেবারে। গীতাদেবী বলেন, ‘‘আমরা আগেও দোকান বন্ধের জন্য অভিযান করেছিলাম। লাভ হয়নি।”


দোকান ভাঙচুরের পর ছড়িয়ে পড়ে সার

ওই সারের দোকানের মালিক রামপদ সামন্ত অবশ্য দাবি করেছেন, “আগে মদ বিক্রি করতাম। এখন তা বন্ধ। রাগ থেকেই আমার দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছে লোকজন।” কিন্তু লাইসেন্স তো রয়েছে সার বিক্রির, মদ বিক্রি করেন কী ভাবে? রামবাবুর জবাব, “অনেকেই তো মদ বিক্রি করে। তাই আমিও শুরু করেছিলাম। সারের দোকান ভাল চলছিল না।”

অভিযোগ, আবগারি দফতর ও পুলিশের যোগসাজশেই চোলাই ব্যবসার এত রমরমা। সঙ্গে রয়েছে শাসকদলের পরোক্ষ মদতও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চোলাই ব্যবসায়ী পরিষ্কার জানালেন, “প্রতি সপ্তাহে আবগারি ও পুলিশের লোক এসে টাকা নিয়ে যায়। ওরা কেউ তো বিক্রি বন্ধ করতে বলেনি কোনও দিন। তবে গ্রামের লোক এ ভাবে ভাঙচুর চালালে পুলিশ বেশি টাকা চায়।” এক চোলাই কারখানার মালিকের কথায়, “পুজোর আগে অভিযান চালিয়ে সব সরঞ্জাম নিয়ে গিয়েছিল আবগারি দফতরের বাবুরা। ওদের অফিস থেকে সব সরঞ্জাম নিয়ে আসতে হয়েছে মোটা টাকা দিয়ে।”

প্রকাশ্যে মদ বিক্রি হচ্ছে জেলা জুড়ে। এমনকী বাদ যাচ্ছে না মিষ্টির দোকান, জুতোর দোকানও। অভিযোগ, পলিথিন ভর্তি চোলাই মদ নিয়ে সাইকেলে করে অলি-গলিতে বিক্রি চলছে ঘাটাল মহকুমায়। কিন্তু চোলাই বন্ধে আবগারি ও পুলিশ-প্রশাসনের কোনও হুঁশ নেই।

ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকী রঞ্জন প্রধান বলেন, “আবগারি দফতরকে সমস্ত অবৈধ মদের দোকান বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বার আমি নিজে অভিযান শুরু করব।” আবগারি দফতরের ওসি রনজিৎ সাঁতরার দাবি, “অভিযান করে বহু দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খবর পেলেই আমরা অভিযান করি। ক’দিন আগেই সেকেন্দারি গ্রামে অভিযান চালিয়ে ছিলাম।”

চলতি বছরের গোড়াতেই মদ্যপ স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তাঁকে গাছে বেঁধে পিটিয়ে খুন করেছিলেন দাসপুরেরই কাশিয়াড়া গ্রামের এক মহিলা। ওই ঘটনার পরও গ্রামের মহিলারা একের পর অবৈধ ঠেক ভেঙেছিলেন। তার প্রভাব পড়েছিল গোটা দাসপুরে। কিন্তু ক’দিন পরই পরিস্থিতি আবার যেমন ছিল তেমনই হয়ে গিয়েছে।

কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন