World Thalassemia Day

অন্যের জন্য রক্ত সংগ্রহে প্রাণপাত থ্যালাসেমিয়া-দম্পতির

পাঁশকুড়ার মাইশোরা এলাকার জগন্নাথপুর গ্রামের বছর আটত্রিশের দিব্যেন্দু পেশায় তথ্য প্রযুক্তি কর্মী। চোদ্দো বছর আগে নিজের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৩ ০৭:৩২
Share:

রক্তদান শিবিরে রক্ত দিচ্ছেন দিব্যেন্দু। নিজস্ব চিত্র digantamannaabp@gmail.com

পুত্র সন্তান জন্মানোর পর বাবা-মা,পরিবারের সকলেই খুশি হয়েছিলেন। আনন্দে ছিল জগন্নাথপুর গ্রামের সামন্ত পরিবার। কিন্তু মাস ছয়েক পরে সামন্ত দম্পতি জানতে পারেন তাঁদের একমাত্র সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। বাবা দিব্যেন্দু ও মা মৌসুমী সামন্তর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। পরীক্ষা করে জানতে পারেন তাঁরা নিজেরাও থ্যালাসেমিয়ার বাহক।

Advertisement

প্রথম কয়েকটা বছর ছেলের জন্য রক্ত পেতে কালঘাম ছুটে যায়। ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে রক্তের অপেক্ষায় শত শত মানুষের ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই দিব্যেন্দু ও মৌসুমী মনে মনে শপথ নেন ঘুরে দাঁড়ানোর। সেই শুরু। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে গত দশ বছর ধরে চলছে তাঁদের অক্লান্ত লড়াই। সেই লড়াইয়ের পথ ধরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে চলেছেন তাঁরা। অন্যদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি দিব্যেন্দু ও মৌসুমী নিজেরাও রক্তদান করেন। সেই সঙ্গে নিরন্তর প্রচার চালান থ্যালাসেমিয়া সচেতনতার। মানুষকে বোঝান, বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষায় জোর দিতে। তুলে ধরেন নিজেদের উদাহরণ।

পাঁশকুড়ার মাইশোরা এলাকার জগন্নাথপুর গ্রামের বছর আটত্রিশের দিব্যেন্দু পেশায় তথ্য প্রযুক্তি কর্মী। চোদ্দো বছর আগে নিজের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করেন। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করেননি কেউই। ২০১২ সালে দিব্যেন্দু ও মৌসুমীর ছেলে হয়। জন্মের ছ'মাস পর জানা যায় শিশুটি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। নিজেদের রক্ত পরীক্ষার পর দিব্যেন্দু ও মৌসুমী জানতে পারেন তাঁরাও থ্যালাসেমিয়ার বাহক। প্রথমে কলকাতার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে ছেলেকে নিয়ে যেতেন রক্ত দেওয়ার জন্য। একবার রক্তের অভাবে ছেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের পরিবারকে রক্তের জন্য হাহাকার করতে দেখার সেই ছবি ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছিল সামন্ত দম্পতিকে।

Advertisement

আরজিকর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কয়েকজন কর্মীর সাথে দিব্যেন্দুর পরিচয় হয়। বছর দশেক আগে তাঁরা দিব্যেন্দুকে রক্তদান শিবির আয়োজন করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। বিষয়টি মনে ধরে দিব্যেন্দুর স্ত্রী মৌসুমীরও।স্বামী-স্ত্রী দু'জনে মিলে শুরু করেন রক্তদানের প্রচার। রক্তদান শিবির আয়োজনের আর্জি নিয়ে সামন্ত দম্পতি ছুটে যান বিভিন্ন পুজো কমিটি,পারিবারিক অনুষ্ঠানের আয়োজকদের কাছে। অন্যদের উৎসাহিত করতে দিব্যেন্দু ও মৌসুমী দু'জনেই রক্তদান করেন। শুধু রক্তদান শিবিরের আয়োজন কিংবা রক্তদান করাই নয়। বিয়ের আগে রক্তবাহিত সমস্ত ধরনের রোগের ব্যাপারে জানতে রক্ত পরীক্ষার বার্তা নিয়ে ছুটে যান ওঁরা।

দিব্যেন্দু বলেন, ‘‘ছেলে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শুনে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।পরে দেখলাম আমরা একা নই। আমাদের মতো বহু বাবা-মায়ের সন্তান থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্ত দেওয়া গেলে একজন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত আর পাঁচজনের মতো সুস্থ-স্বভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। তাই যাতে একজনও থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের রক্তের অভাব না হয় সেই লক্ষ্যে দশ বছর ধরে আমি আর আমার স্ত্রী লড়াই করছি। তবে একই সঙ্গে বলব, বিয়ের আগে অবশ্যই রক্তপরীক্ষা করান। আগামীকাল আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস। পাড়ারই একটি অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করেছি।’’

মৌসুমীর কথায়, ‘‘থ্যালাসেমিয়া নিয়ে মানুষের একাংশের মধ্যে ভ্রান্ত কিছু ধারণা রয়েছে। সেই ভ্রান্তি দূর করাই আমাদের লক্ষ্য। প্রতিটি স্কুলের উদ্যোগে রক্ত বাহিত রোগের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা গেলে ভবিষ্যতে অনেক বড় বড় বিপত্তি আটকানো যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন