নীরব বিচারের বাণী

হাওড়া কাণ্ডের প্রতিবাদে এপ্রিলের শেষ থেকে টানা কর্মবিরতি চলছে। দফায় দফায় কর্মবিরতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১মে পযর্ন্ত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০০:০৯
Share:

খাঁ-খাঁ: প্রায় ফাঁকা ঘাটাল আদালত চত্বর। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

চাকরি বলে কথা। হাজিরা তো দিতেই হবে। অগত্যা।

Advertisement

আদালত বন্ধ আছে নাকি! কই জানা ছিল না তো!

সরকারি চাকুরে আর আইনজীবীদের পেন ডাউনের কথা না জেনে হাজির হওয়া বিচারপ্রার্থী। পশ্চিম মেদিনীপুর হোক ঝাড়গ্রাম, দুই জেলার যে কোনও আদালতে হঠাৎ ঢুকে পড়লে মূলত এই দু’ধরনের লোকদের সঙ্গে দেখা হতে পারে। কয়েকজন মুহুরি মাঝে মধ্যে আসছেন বটে। তবে বিশেষ কাজ না থাকায় কোনওরকমে ঢুঁ মেরেই ফের বাড়ির পথ ধরছেন তাঁরা। আর আছেন, পান, চা-বিস্কুট বিক্রেতারা। যাঁদের বিক্রি এক ধাক্কায় হয়ে গিয়েছে অর্ধেক।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ঘাটাল আদালতে এসেছিলেন হাওড়ার উত্তর ভাটোরার ঝন্টু বেরা। তিনি বলছেন, “একটি খুনের মামলায় বৃহস্পতিবার ঘাটাল আদালতে এসেছিলাম। কিন্তু কোনও কাজই হল না। এই গরমে সব কাজ ফেলে এসেছিলাম।” এ দিন মেদিনীপুর আদালতে দেখা গেল, কয়েকজন আইনজীবীদের অনেকে সাদা পোশাকে এসেছেন। মূলত ভোটচর্চায় ব্যস্ত তাঁরা। মাঝে মাঝে সে আড্ডায় এসে যোগ দিচ্ছেন মুহুরিরা। বিচারপ্রার্থীদের বক্তব্য, দিন কয়েকের জন্য কর্মবিরতি করতে যাচ্ছেন বলে কাজ বন্ধ করেছিলেন আইনজীবীরা। মাঝে পার হয়ে গিয়েছে কয়েক সপ্তাহ। কর্মবিরতি তোলেননি আইনজীবীরা।

হাওড়া কাণ্ডের প্রতিবাদে এপ্রিলের শেষ থেকে টানা কর্মবিরতি চলছে। দফায় দফায় কর্মবিরতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১মে পযর্ন্ত। তার জেরেই দুর্ভোগ চলছে রাজ্যের সব আদালতে। অতি সাধারন মামলাতেও দিনের পর দিন জেলে থাকতে হচ্ছে।বিনা বিচারে আটকে থাকছেন বহু বিচারপ্রার্থী। মামলার পাহাড় জমছে। পুরনো মামলা শুরু হলেও ফের আটকে গিয়েছে। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোনও অভিযুক্তকে জামিন দিলেও আইনজীবীরা কাজ না করায় বন্ড দাখিল করা যাচ্ছে না। তাই অভিযুক্তকে সংশোধনাগারেই থাকতে হচ্ছে। নাম ঠিকানা পরিবর্তন, জমি-জমা রেজিস্ট্রির কাজও বন্ধ। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে অভিযোগ দায়েরও করা যাচ্ছে না।

ঘাটালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত,সহকারী দায়রা আদালত কাম সিভিল জাজ সিনিয়র ডিভিশন, এসিজেএম (অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল জাজ জুনিয়র ডিভিশন সহ মোট ছটি কোর্ট থেকে পরিষেবা পান বিচারপ্রার্থীরা। সাব সিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টও আছে। ঘাটাল আদালতে বিভিন্ন কোর্টে নিয়ম করে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ আসেন। বহু মামলা নিষ্পত্তি হয়। সব কাজ শিকেয়। দাসপুরের সুনীল দাস বললেন, “প্রতিদিনই আসছি। আর ঘুরে যাচ্ছি। ঘর শুরু করেছিলাম। জমি সমস্যায় ভাই মামলা করেছে। শুনানি হচ্ছে না। জোর করে বাড়ি তৈরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’

মেদিনীপুর শহরে এক গোলমালের ঘটনায় দিন কয়েক আগে পুলিশ দু’জন বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। তারা এখন জেলে রয়েছে। বিজেপির জেলা সম্পাদক অরূপ দাস বলেন, ‘‘কর্মবিরতির জেরে জামিনের আবেদন করা যাচ্ছে না।’’ মেদিনীপুর আদালতের প্রবীণ আইনজীবী তথা বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন সদস্য শান্তিকুমার দত্ত বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন আদালতের কাজকর্ম বন্ধ থাকা খুবই উদ্বেগের ব্যাপার। আইনজীবীদের যথাযথ সম্মান রেখে দ্রুত বিষয়টির সমাধান হওয়া উচিত।’’

কী বলছেন আইনজীবীরা? ঘাটাল বার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি দেবপ্রসাদ পাঠক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আইনজীবীরা বিপন্ন। সমাজের প্রতিটি স্তরের সাধারণ মানুষও বিপন্ন। প্রশাসন বিচারব্যবস্থাকে মাথা নত করে থাকতে বাধ্য করছে। ন্যায় পেতে আন্দোলন চলবে।” ল'ইয়ার্স ফোরামের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তথা আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, ‘‘আজ ২২ দিন হয়ে গেল আমাদের কর্মবিরতি চলছে। দোষীদের গ্রেফতারে কোনও পদক্ষেপই করেনি পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রীও নীরব।’’

টাইপিস্টদের কাজ নেই। একই অবস্থা মুহুরিদেরও। ঘাটাল আদালতে ঢোকার মুখে চা, মুড়ি, পান বিড়ির দোকান রয়েছে নেপাল সামন্তের। এখন তো অখণ্ড অবসর? নেপালের কথায়, ‘‘কী আর বলব। এ ভাবে কতদিন চলবে যে জানে। বিক্রি তো প্রায় নেই বললেই চলে।’’

(তথ্য: অভিজিৎ চক্রবর্তী, বরুণ দে, কিংশুক গুপ্ত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন