কার্যালয় দখল অভিযানে অস্ত্র, বিতর্কে বাম বিধায়ক

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের দুর্গ পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার রাতুলিয়ায় সিপিএম শনিবার একটি কার্যলয় পুনর্দখল করল। সেই অভিযানে অস্ত্র হাতে দেখা গেল বাম বিধায়ক ইব্রাহিম আলিকে। মিছিলেও দেখা গেল— টাঙ্গি, তির-ধনুক। যা ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৯ ০০:২০
Share:

মিছিলে টাঙ্গি কাঁধে ইব্রাহিম আলি। নিজস্ব চিত্র

লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যের নানা প্রান্তে দলীয় কার্যালয় পুনরুদ্ধার শুরু করেছে বামেরা। ভোটে বিপর্যয়ের পরেও এমন ঘটনায় কোথাও রাম-বাম হাত ধরাধরি তত্ত্ব, কোথাও বা বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূলের বামেদের সাহায্য করার ব্যাখ্যা সামনে আসছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের দুর্গ পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার রাতুলিয়ায় সিপিএম শনিবার একটি কার্যলয় পুনর্দখল করল। সেই অভিযানে অস্ত্র হাতে দেখা গেল বাম বিধায়ক ইব্রাহিম আলিকে। মিছিলেও দেখা গেল— টাঙ্গি, তির-ধনুক। যা ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

স্থানীয় সূত্রে খবর, রাতুলিয়া বাজারে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে একটি দোতলা বাড়ি শাখা অফিস হিসাবে ব্যবহার করত সিপিএম। জায়গা-সহ বাড়িটির মালিক চারজন সিপিএম নেতা। চারজনের মধ্যে তিনজন ছিলেন তৎকালীন সিপিএম নেতা সুধাংশু আদকের অনুগামী। পরবর্তীকালে সুধাংশু তৃণমূলে যোগ দিলে ওই তিনজনও যোগ দেন তৃণমূলে। এর পরেই ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল সিপিএমের ওই কার্যালটির দখল নেয় বলে অভিযোগ। সেই থেকে ওই অফিসে সিপিএম নেতা-কর্মীরা ঢুকতে পারতেন না বলে অভিযোগ স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের।

Advertisement

এ দিন পাঁশকুড়া পূর্ব বিধানসভার বিধায়ক ইব্রাহিমের নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল গিয়ে দলীয় কার্যালয়টির দখল নেয়। তাঁরা অফিসের চারিদিকে দলীয় পতাকা লাগান এবং দেওয়ালে আঁকেন দলীয় প্রতীক। সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘তৃণমূল ২০১৬ সালে জোর করে রাতুলিয়ায় আমাদের শাখা অফিসটি দখল করে নিয়েছিল। আজ আমরা অফিস ফের দখল করলাম।’’

স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুধাংশু আদক বলেন, ‘‘২০১৬ সালের পর থেকে ওই পার্টি অফিসটি বন্ধই ছিল। আমরা কোনও দিন ওখানে দলীয় কাজ করিনি। সিপিএমের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’

কিন্তু কার্যালয় উদ্ধারের গুরুত্ব এ দিন ফিকে পড়ে গিয়েছে অস্ত্র হাতে বিধায়ককে হাঁটতে দেখা যাওয়ায়। একজন বিধায়ক কীভাবে কাঁধে টাঙ্গি নিয়ে মিছিল করেন, সে নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তাঁদের কটাক্ষ, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি’র মিছিলে অনেক সময় অস্ত্রের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। এখন বাম-রাম মিলে যাওয়ায় সিপিএম’ও অস্ত্র মিছিল করছে।

এ ব্যাপারে তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক কার্যকরী সভাপতি কুরবান শা’র কটাক্ষ, ‘‘এ রাজ্যে বাম আর রাম এখন দুই ভাই। বামেরা ভোট দিয়েছে বিজেপিকে আর ঘুরছে লাল ঝাণ্ডা নিয়ে। এই দু’টি দলই অস্ত্র, গুলিগোলার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। তাই এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’’

মিছিলে দলীয় কর্মীদের হাতে অস্ত্র থাকা প্রসঙ্গে ইব্রাহিমের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রত্যেক মানুষের বাঁচার অধিকার রয়েছে। আত্মরক্ষার প্রয়োজনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মানুষ নিজের পথ অবলম্বন করেছেন। কেউ শিখিয়ে দেবে, কে কী করবে? অনেক আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ মিছিলে এসেছিলেন। কেউ কেউ শিকারে বেরিয়ে মিছিল দেখে যোগ দেন।’’

কিন্তু আপনি বিধায়ক হয়ে অস্ত্র নিয়ে মিছিলে হাঁটলেন কেন? ইব্রাহিমের জবাব, ‘‘আমি শুধু ওই অস্ত্র হাতে নিয়ে দেখছিলাম। আর
কিছুই না!’’

অন্য দিকে, বাম-রাম মিলে যাওয়া এংব অস্ত্র মিছিল প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য যুব মোর্চার সদস্য সিন্টু সেনাপতি বলেন, ‘‘বামেরা ৩৪ বছর ধরে মানুষকে অস্ত্র দেখিয়ে রাজত্ব করেছে। বিজেপি এই নীতিতে বিশ্বাস করে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন