সিপিএমের ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলা গঠনের আগে এলাকার সমস্ত জোনাল ও লোকাল কমিটিগুলির অবলুপ্তি ঘটিয়ে দিয়েছে দল। নতুন করে ২০টি এরিয়া কমিটি গঠন করা হয়েছে। এককথায় জঙ্গলমহলে সংগঠনকে ঢেলে সাজার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে সিপিএম।
যে সমস্ত নেতা দীর্ঘদিন দলীয় কোনও পদে থাকেননি, তেমন পুরনো মুখেদের এরিয়া কমিটিগুলির নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়েছে। পঞ্চয়েত ভোটের আগে ঝাড়গ্রাম জেলায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য কার্যত মরিয়া হয়ে উঠেছে বামেরা। দলীয় সূত্রের খবর, আগামী ২৮ মে মেদিনীপুরে আসছেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। ওই দিনই ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলা কমিটি গঠন করার কথা।
নতুন ঝাড়গ্রাম জেলায় সিপিএমের নেতাই-অস্বস্তি যে তৃণমূলের ব্রহ্মাস্ত্র, তা ভালই বোঝেন বাম নেতৃত্ব। দলের বিনপুর ও লালগড় এলাকার শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ ওই মামলায় জেলবন্দি এখনও। তবু বামেদের দাবি, গত ছ’বছরে নানা প্রশ্নে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মানুষের মনে ক্ষোভ জমেছে। এমনকী পঞ্চায়েতস্তরে উন্নয়নের ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে শাসক দলের নিচুতলার কর্মীরাই দলের একাংশের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। সূত্রের খবর, এই আবহে বিজেপি যাতে লাভের গুড় পুরোটা না খেতে পারে, সে ব্যাপারে সচেষ্ট হচ্ছে সিপিএমও।
দলের রাজ্য প্লেনামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে দলের জোনাল ও লোকাল কমিটিগুলি ভেঙে দিয়ে এরিয়া কমিটি গড়ে তোলা হচ্ছে। দলের সবচেয়ে নীচে ব্রাঞ্চ কমিটি, তার উপর এরিয়া, জেলা এবং তারও মাথায় রাজ্য কমিটি থাকবে।
সারা রাজ্যে এই অভিন্ন মডেল রূপায়ণের কাজ শুরু হয়েছে। উদ্দেশ্য আরও নিবিড় ভাবে এলাকার মানুষের জন্য জনসংযোগ গড়ে তোলা। ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলা গঠনের আগে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হল। ৮ থেকে ১৪ মে-র মধ্যে অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের উপস্থিতিতে ঝাড়গ্রামের ৮টি ব্লক ও ১টি পুর-এলাকার মোট ৯টি জোনাল কমিটি ও ৩৮ টি লোকাল কমিটির অবলুপ্তি ঘটিয়ে নতুন ২০টি এরিয়া কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলায় ২০টি এরিয়া কমিটির তলায় থাকছে প্রায় দু’শোটি ব্রাঞ্চ কমিটি।
আগে ঝাড়গ্রাম মহকুমার প্রতিটি ব্লকে ছিল একটি করে জোনাল কমিটি এবং চার থেকে পাঁচটি করে লোকাল কমিটি। এখন ঝাড়গ্রাম জেলার ৭টি ব্লকের প্রতিটিতে দু’টি করে এরিয়া কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ঝাড়গ্রাম ব্লকে তিনটি এবং ঝাড়গ্রাম শহরে তিনটি করে এরিয়া কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রতিটি এরিয়া কমিটির দায়িত্বে এক জন করে আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে দলের সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত এই আহ্বায়কদের নেতৃত্বে এরিয়া কমিটি গুলির কাজকর্ম পরিচালিত হবে। দীর্ঘদিন যাঁরা দলের নেতৃত্ব পদে ছিলেন না এমন নেতারা এসেছেন এরিয়া কমিটির দায়িত্বে। যেমন, সাঁকরাইল ব্লকের সাঁকরাইল-২ এরিয়া কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শিশির মহাপাত্র। বেলপাহাড়ি এরিয়া কমিটির দায়িত্ব পেয়েছেন বিনপুরের প্রাক্তন বিধায়ক দিবাকর হাঁসদা। পূর্বতন ৯টি জোনাল কমিটির সম্পাদকদের মধ্যে একমাত্র বেলপাহাড়ি জোনাল সম্পাদক উদ্ধব মাহাতোকে নবগঠিত শিলদা এরিয়া কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম এলাকার ১০ জন অবিভক্ত জেলা কমিটির সদস্যদের মধ্যে লালগড়ের অনুজ পাণ্ডে ও ফুল্লরা মণ্ডল নেতাই মামলায় জেলবন্দি আছেন। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলা গঠনের আগে আমরা নিচু তলায় সমস্ত এরিয়া কমিটি গঠন ফেলেছি। কিছুদিনের মধ্যেই জেলা সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হবে।”