নজর নেই ঝাড়গ্রামে

হেলমেট নেই, তেল ভরছেন পাম্প কর্মীরা

দিন কয়েক আগের ঘটনা। ঝাড়গ্রামের গাডরো এলাকায় এক পথ দুর্ঘটনায় মত্যু হয় মোটর বাইক আরোহী এক যুবকের। তাঁর মাথায় হেলমেট ছিল না। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই দিন হেলমেট ছাড়াই ঝাড়গ্রামের একটি পাম্প থেকে মোটর বাইকে পেট্রল ভরেছিলেন ওই যুবক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

অনিয়ম: মাথায় হেলমেট নেই। তাও ঝাড়গ্রামে পেট্রল পাম্পে চলছে তেল দেওয়া। নিজস্ব চিত্র

দিন কয়েক আগের ঘটনা। ঝাড়গ্রামের গাডরো এলাকায় এক পথ দুর্ঘটনায় মত্যু হয় মোটর বাইক আরোহী এক যুবকের। তাঁর মাথায় হেলমেট ছিল না। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই দিন হেলমেট ছাড়াই ঝাড়গ্রামের একটি পাম্প থেকে মোটর বাইকে পেট্রল ভরেছিলেন ওই যুবক।

Advertisement

এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আর এ রকম একের পর এক ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’ প্রচার-কর্মসূচিকে কার্যত প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। আগে পেট্রল পাম্পগুলিতে সিভিক ভলান্টিয়াদের দিয়ে নজরদারি চালানো চালানো হত। এখন বেশির ভাগ পাম্পে নজরদারির বালাই নেই।

পেট্রল পাম্পে জ্বলজ্বল করে নোটিস বোর্ড— ‘উইদাউট হেলমেট নো পেট্রল’। অথচ, একের পর এক বাইক আরোহী এসে দাঁড়ান, কারও কারও মাথায় টুপি থাকলেও হেলমেটের বালাই নেই। পাম্প কর্মীরা বাইকের ট্যাঙ্কে তেল ভরে দিচ্ছেন নির্দ্বিধায়।

Advertisement

এটাই প্রতিদিনের ছবি ঝাড়গ্রাম শহরের। শুধু শহর নয়, ঝাড়গ্রাম জেলার আরও কয়েকটি পাম্পে অনেক সময়ই রাজ্য পুলিশের নয়াবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শাসক দলের একাংশ নেতা-কর্মীও হেলমেট না পরে বাইক নিয়ে পাম্পে পেট্রেল ভরছেন হামেশাই। বিশেষত, শাসক দলের বাইক র‌্যালির জন্য পেট্রল ভরার সময় অধিকাংশ কর্মীই হেলমেট ছাড়া পাম্পে আসেন। অনেকক্ষেত্রে অন্য কারও হেলমেট হাতে ধরিয়ে বিনা হেলমেটের বাইক আরোহীদের তেল দেওয়া হচ্ছে। কখনও আবার বিনা হেলমেটের বাইক চালকদের প্লাস্টিকের বোতল বা জারে তেল ভরে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ, যে উদ্দেশ্যে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল, তা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে, বিনা হেলমেটে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। পেট্রল পাম্প কর্মীদের অবশ্য পাল্টা দাবি, কিছু লোক হেলমেট ছাড়া তেল নিতে এসে হম্বিতম্বি শুরু করেন। বাধ্য হয়েই তখন তাঁদের তেল দিতে হয়।

ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ ও জেলা ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ কর্মসূচির আওতায় স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে নানা কর্মসূচি হয়েছে। এ বার পুজোর সময় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ’ সংক্রান্ত সেরা থিম ও সচেতনতা প্রচারের জন্য ঝাড়গ্রাম জেলার দুর্গা পুজো কমিটিগুলিকে পুরস্কৃত করা হয়। খোদ জেলা পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত ঝাড়গ্রামে এফএম রেডিও বার্তায় জনগণকে সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভ’ সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন করছেন। ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন রাস্তায় বিশেষ যন্ত্র দিয়ে স্পিড লিমিট নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আইন যাঁরা ভাঙছেন, তাঁদের জরিমানা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও একাংশ এলাকাবাসীর শিক্ষা হচ্ছে না। এ জন্য পাম্প কর্মীদের গয়ংগচ্ছ মনোভাবকেই দুষছে পুলিশ-প্রশাসন। গত এক মাসে ঝাড়গ্রাম জেলা ও সংলগ্ন এলাকায় মোটর বাইক দুর্ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের এক জনও হেলমেট পরেননি বলে পুলিশ সূত্রের খবর। একাংশ পেট্রল পাম্প কতৃর্পক্ষ খদ্দের হারানোর ভয়ে বিনা হেলমেটেই বাইকে তেল ভরে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তার ফলে প্রাণ দিয়ে মাশুল গুনছেন ঝাড়গ্রামের পেনিয়াভাঙা গ্রামের রঞ্জিত শবরদের মতো অনেকেই।

ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “ঝাড়গ্রাম শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত নজরদারি চলে। হেলমেট ছাড়া বাইক চালালে জরিমানা করা হচ্ছে। এ ছাড়া শহরের কিছু রাস্তায় গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, পেট্রল পাম্পের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের এক্তিয়ারে। এ বিষয়ে ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন বলেন, “পাম্প যদি হেলমেট ছাড়া তেল দেয়, তবে খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন