যত ভয় তত ক্ষয় নয়

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক পি মোহনগাঁধী বলেন, ‘‘ঝড়ের পূর্বাভাস থাকায় কয়েকটি ব্লককে সতর্ক করা হয়েছিল। আগাম প্রস্তুতির  নেওয়া হয়। ঝড়ে জেলায় বড় বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০৪:০২
Share:

আসতে পারে ফণী। এই আশঙ্কায় শুক্রবারের মতো শনিবারও মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে অনেক বাস বেরল না। নিজস্ব চিত্র

ফণী মোকাবিলার যাবতীয় প্রস্তুতি সারা ছিল। তৎপর ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় নদীর আশেপাশের এলাকার মানুষকে শুক্রবার সকাল থেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো শুরু হয়। তবে শেষমেশ অবশ্য ফণী জেলায় তেমন ছোবল মারতে পারেনি। শুক্রবার গভীর রাতে জেলায় ঢুকলেও তখন ফণীর শক্তি ছিল অনেক কম। ফলে, এড়ানো গিয়েছে বড় ক্ষয়ক্ষতি। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ঝড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭৭১টি বাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙেছে বিদ্যুৎ খুঁটি, গাছ। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, কেশিয়াড়ি, গোয়ালতোড়, খড়্গপুর গ্রামীণ, মোহনপুরে অনেক গাছ উপড়ে পড়েছিল। গাছগুলো সরানো হয়েছে।’’

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক পি মোহনগাঁধী বলেন, ‘‘ঝড়ের পূর্বাভাস থাকায় কয়েকটি ব্লককে সতর্ক করা হয়েছিল। আগাম প্রস্তুতির নেওয়া হয়। ঝড়ে জেলায় বড় বিপর্যয় এড়ানো গিয়েছে।’’ তিনি জানান, কয়েকটি এলাকায় কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার হিসেব চলছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘রাজ্যের চারটি জেলায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। দেখা যাচ্ছে, চারটি জেলার মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরেই ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।’’

জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে যে সংখ্যক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর পরিকল্পনা ছিল, ফনী পুরীতে তাণ্ডব করার পরে তড়িঘড়ি তার থেকে কয়েকগুণ বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়। কেমন? প্রাথমিকভাবে জেলার ৫ টি ব্লকের ৭,০৯৯ জন মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর পরিকল্পনা ছিল। এরমধ্যে দাঁতন ১ এর ১,৯২৮ জন, দাঁতন- ২ এর ১,২৫৬ জন, মোহনপুরের ১,৫০৫ জন, নারায়ণগড়ের ২,৩৮২ জন এবং খড়্গপুর- ১ এর ২৮ জন ছিলেন। শেষমেশ শুক্রবার রাত পর্যন্ত জেলার ৫২,২৯৭ জন মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়।

Advertisement

খড়্গপুর আইআইটি, রামনগর, খড়্গপুর শহর সংলগ্ন কলাইকুণ্ডা, ঘোলঘোরিয়া এলাকাতেও ভেঙে পড়ে গাছ। ফণীর জেরে শুক্রবার রাতে খড়্গপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে যায় নয়াদিল্লি-ভুবনেশ্বর দুরন্ত এক্সপ্রেস। শনিবার সকালে আকাশ পরিস্কার হয়ে গেলেও সেটি না ছাড়ায় খড়্গপুর স্টেশনেই যাত্রী বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে রেলের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করে ট্রেনটি ছাড়া হয়।

গড়বেতা ২ বিডিও স্বপন দেব জানান, শুক্রবার রাতেই হাজার চারেক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে তুলে আনা হয়েছিল। শনিবার তাঁদের অনেকেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। গড়বেতা ১ ব্লকের যুগ্ম বিডিও বিশ্বনাথ ধীবর জানান, গড়বেতার ৮ টি শিবিরে প্রায় ৮০০ জনকে তুলে আনা হয়েছিল, অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন। গড়বেতা ৩ ব্লকের ৮০ টি পরিবারকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছিল।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় রয়েছেন। ফলে, তটস্থ ছিল প্রশাসন। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পরিস্থিতির পর্যালোচনায় বারেবারে বৈঠক করেছেন জেলাশাসক। ছিলেন দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সৌমনা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার ২১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৩১টি পঞ্চায়েতে ঝড়ের প্রভাব পড়েছে। এই সব এলাকায় ৭২৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। সেখানে রান্নাও হয়েছে। কিছু আশ্রয় কেন্দ্র হয়েছিল ফ্লাড শেল্টারে, কিছু হয়েছিল হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়িতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন