বোধনের আগেই বিসর্জনের বিষাদ

মায়াচরের দুই পড়শি জুড়ল মৃত্যুতে

মহিষাদল ব্লকের মায়াচরের বাসিন্দা কার্তিকের হৃদরোগ ছিল। আর তাঁর প্রতিবেশী স্বপন ছিলেন সুগারের রোগী। গত সোমবার সকালে দুজনেই ডাক্তার দেখানোর জন্য মায়াচর-দনিপুর রুটের ভুটভুটিতে উঠেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মহিষাদল শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০১:০২
Share:

মায়াচরে নৌকাডুবি। —ফাইল চিত্র

দু’জনে প্রতিবেশী। একই দিনে দু’জনে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাবেন বলে। চড়ে ছিলেন একই ভুটভুটিতে। নৌকাডুবির পরে একজন নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। অন্যজন পায়ে গুরুতর আঘাত নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। নিখোঁজ ব্যক্তি কার্তিক সামন্তের দেহ মিলেছে বৃহস্পতিবার। ঘটনাচক্রে, এ দিনই কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নৌকাডুবিতে আহত স্বপন প্রধানেরও মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

মহিষাদল ব্লকের মায়াচরের বাসিন্দা কার্তিকের হৃদরোগ ছিল। আর তাঁর প্রতিবেশী স্বপন ছিলেন সুগারের রোগী। গত সোমবার সকালে দুজনেই ডাক্তার দেখানোর জন্য মায়াচর-দনিপুর রুটের ভুটভুটিতে উঠেছিলেন। চড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা কার্তিকদের ভুটভুটিটি জোয়ারের ধাক্কায় উল্টে গিয়েছিল। নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। নৌকার খোলে আটকে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন স্বপন। তাঁকে প্রথমে তমলুক জেলা হাসপাতালে এবং পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়।

কার্তিকের খোঁজে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ নদীতে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছিল। ওই সময় মহিষাদলের বাড় অমৃতবেড়িয়া গ্রামের বেলতলা সংলগ্ন রূপনারায়ণের তীরে তারা কার্তিকের দেহ উদ্ধার করে। দেহটি মহিষাদল থানায় আনা হয়। দুপুরে মৃতের পরিজন থানায় এসে দেহ সনাক্ত করেন। এ দিনই এসএসকেএমে মারা গিয়েছেন স্বপন প্রধান। তাঁর দেহ কলকাতা থেকে মায়াচরে এনে ‌শেষকৃত্য করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিজন।

Advertisement

স্বপনের শেষকৃত্য মায়াচরে হলেও নিজের গ্রামে এ দিন ফিরল না কার্তিকের দেহ। নৌকাডুবির পর থেকেই দনিপুর-মায়াচর ফেরি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে মহিষাদলের সঙ্গে সহজে যোগাযোগের পথ ছিন্ন মায়াচরবাসীর। মহিষাদল থেকে মায়াচর যেতে হলে তাঁদের ঘুরপথে হাওড়া দিয়ে পৌঁছতে হচ্ছে (মহিষাদল থেকে বাসে করে গেঁওখালি। সেখান থেকে জলপথে গাদিয়াড়া। সেখান থেকে পৌঁছতে হবে মায়াচরে)। যা যথেষ্ট কষ্টকর। মৃতদেহ ওই ঘুরপথে মায়াচরে নিয়ে যাওয়াটাও খরচ সাপেক্ষ। তাই কার্তিকের পরিজন দেহ মায়াচরে নিয়ে না গিয়ে এ দিন বাড় অমৃতবেড়িয়ার ভোলসরাতেই তাঁর শেষকৃত্য করার সিদ্ধান্ত নেন।

কার্তিকের ছেলে লালু সামন্ত বলেন, ‘‘টাকার অভাবে মা বাবাকে শেষ দেখাটাও দেখতে পেল না।’’ তাঁর পরিজনের আপেক্ষ, ‘‘শেষযাত্রার আগে নিজের ভিটের ধুলোও গায়ে মাখতে পারলেন না কার্তিক!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন