অসহায়: বাড়িতেই চলছে চিকিৎসা। ভগবানপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের শীতলা মন্দির চত্বরে পা দিতেই দেখা গেল থিকথিকে ভিড়। শিশু-মহিলা থেকে ছেলে-বুড়ো, সকলের মুখেই ক্ষোভের কথা। গোটা গ্রামে জ্বরে পুড়ছে, ঘরে ঘরে ডেঙ্গি। কিন্তু কেউ খোঁজ নিচ্ছে না।
ক’দিন আগে পটাশপুরের খাড় গ্রামেও একই ছবি সামনে এসেছিল। তা থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর যে শিক্ষা নেয়নি, তা প্রমাণ করে দিল ভগবানপুরের ইক্ষুপত্রিকা গ্রাম। সোমবার সকালে সাংবাদিককে পেয়েই ছেঁকে ধরলেন গ্রামবাসী। অন্তত কুড়ি জনের হাতে ডেঙ্গির রক্তপরীক্ষার (এনএসওয়ান এজি) পজিটিভ রিপোর্ট। এঁদের অনেকে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ‘ডিসচার্জ সামারি’তেও রয়েছে ডেঙ্গির উল্লেখ।
এ সব খবর অবশ্য স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে নেই। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ জানা বললেন, ‘‘কারও ডেঙ্গি হয়নি। ডেঙ্গি ও জ্বরকে গুলিয়ে ফেলছেন গ্রামবাসী।’’ কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর কি রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছে? প্রশ্ন শুনে টনক নড়ল বিএমওএইচের। স্বাস্থ্য কর্মীদের ডেকে নির্দেশ দিলেন, ‘‘এখনই ওই গ্রামে গিয়ে ডেঙ্গি হতে পারে এমন লোকেদের তালিকা বানান। মঙ্গলবার ভোরে গিয়ে রক্ত নিয়ে জেলা হাসপাতালে পাঠান।’’
দিন পনেরো ধরে জ্বরের প্রকোপ চললেও স্বাস্থ্য কর্মীদের পা যে এলাকায় পড়েনি, তা এ দিন গ্রাম ঘুরেই মালুম হল। সুস্মিতা দাস জ্বরে অচৈতন্য। তাঁর বাড়িতেই স্যালাইন চলছে। আর মাথার উপরে ঝুলছে মাটির হাঁড়ি। তার ফুটো দিয়ে জল পড়ছে কপালে। যা দেখিয়ে এক গ্রামবাসী বললেন, ‘‘গাঁ-গঞ্জে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হচ্ছে। অথচ চিকিৎসা বলতে এটুকুই।’’ গ্রামে মশারি মশারি ব্যবহারের ছবিও দেখা গেল না। গ্রামের পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর। রাস্তার পাশে গোবর গ্যাস প্লান্ট থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ, মজা পুকুরে কচুরিপানা আর ঝোপঝাড়ে জমা জল। গ্রামবাসীরাই ব্লিচিং, চুন ছড়াচ্ছেন।