অস্বাস্থ্যকর: নোংরা জমা জলে মশার বাড়বাড়ন্ত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ চত্বরের নিকাশি নালায়। নিজস্ব চিত্র
ছিল ৯। হয়ে গিয়েছে ২২! তাও আবার এক মাসেরও কম সময়ে।
অসময়ের বৃষ্টিতে খাস জেলার সদর শহর মেদিনীপুরেও চোখ রাঙাতে শুরু করেছে ডেঙ্গি। মাত্র এক মাসেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশই। এক স্বাস্থ্যকর্তা মানছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে। মেদিনীপুর শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা যে বেড়েছে তা মানছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। তাঁর কথায়, “জেলায় নতুন করে কয়েকজন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মেদিনীপুরের কয়েকজনও রয়েছেন।”তবে গিরীশচন্দ্রবাবুর সংযোজন, “এতে উদ্বেগের কিছু নেই। মশাবাহিত রোগ ঠেকাতে ও মানুষজনকে সচেতন করতে মেদিনীপুরে নানা কর্মসূচি চলছে। কোথাও যাতে জল না- জমে সেই বিষয়েও সতর্ক করা হচ্ছে।”
ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির হারটা ঠিক কেমন?
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, গত ২৮ অক্টোবর পর্যন্তও মেদিনীপুরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯। জেলার অন্য এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিললেও সদর শহরের নাম সেই তালিকায় ছিল না। অথচ, সেই মেদিনীপুরেই ১৫ নভেম্বর ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২২। আর গোটা জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭৮। বেসরকারি সূত্রের অবশ্য দাবি, ২২ নয়, মেদিনীপুরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি। সব হাসপাতাল এবং প্যাথোলজি সেন্টার থেকে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট সময় মতো জেলায় পৌঁছচ্ছে না। ফলে, আক্রান্তের সঠিক তথ্য উঠে আসছে না।
শহরবাসীর একাংশের বক্তব্য, অসময়ের বৃষ্টিতে পরিস্থিতি যে জটিল হতে পারে তা বোঝার চেষ্টাই করেনি পুরসভা। তাই মেদিনীপুরে যে সাফাই অভিযান শুরু হয়েছিল, তার গতিও ক্রমে শ্লথ হয়ে যায়। সে কথা অবশ্য মানতে নারাজ পুরসভা। মেদিনীপুরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের দাবি, শহরের বিভিন্ন এলাকায় মশা মারার কাজ চলছে। মশানাশক রাসায়নিক স্প্রে করা হচ্ছে। এই কর্মসূচিতে কখনওই ছেদ পড়েনি। ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত দেখে রবিবারও মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় মশা দমনে অভিযান হয়েছে। ছিলেন জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান। কোথাও জল জমতে না-দেওয়ার জন্য এলাকাবাসীকে অনুরোধ করেছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনিও মানছেন, “মেদিনীপুরে কয়েকজন নতুন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে চিন্তার কিছু নেই। আক্রান্তদের চিকিত্সার দিকে নজর রাখা হয়েছে। এলাকায় এলাকায় সচেতনতা প্রচারও চলছে। মশাবাহিত রোগ মোকাবিলার সব রকম চেষ্টা চলছে।”
শহরের বটতলাচক, পালবাড়ি, রাঙামাটি প্রভৃতি এলাকায় বেশ কয়েকজন জ্বরে ভুগছেন। জেলা প্রশাসনের একাংশ মানছে, সদর শহরে মশার বংশবৃদ্ধি সে ভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না। জঞ্জাল এবং জমা জল সাফাইয়ের কাজ সর্বত্র ঠিক ভাবে হচ্ছে না। প্রশাসনের একাংশের মতে, অসময়ের বৃষ্টিই বিপদ ডেকে আনছে। হাল্কা বৃষ্টিকে তেমন আমল দেন না অনেকে। কিন্তু এরফলে ছাদে ফুলের টবে কিংবা ফাঁকা পাত্রে জল জমে। এতে ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশা বংশবিস্তার করে।
তাপমাত্রা নামায় ডেঙ্গির বিপদ কাটার আশা করছিলেন অনেকে। কিন্তু নিম্নচাপের বৃষ্টি সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। মাস খানেক ধরেই শহরের বেশ কিছু এলাকায় মশার উপদ্রব চলছে। বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশার লার্ভাও মিলেছে। জমা জলে কিলবিল করতে দেখা গিয়েছে লার্ভা। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে মশার দাপট আরও বেড়েছে। ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তে থাকায় সব কাউন্সিলরকে রাস্তায় নেমে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জমা জলা এবং আবর্জনা সাফাইয়ের ব্যাপারে পুরসভাকে আরও তত্পর হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে সতর্কও করা হয়েছে।
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “কাউন্সিলরেরা নিজেরা কাজে নামলে ডেঙ্গি প্রতিরোধ এবং মশার লার্ভা দমনের কাজ অনেকটা সহজ হতে পারে।’’