সপ্তাহ খানেক আগেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৭৮। এখন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৪০। গত দশদিনে জেলায় নতুন করে আরও ৬২ জন মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পারদের ওঠানামা বলছে, জেলায় শীত এসে গিয়েছে। তাও কেন ডেঙ্গিতে রাশ টানা যাচ্ছে না, প্রশ্ন সেখানেই।
গত এক-দেড় সপ্তাহ ধরে জেলার সদর শহর মেদিনীপুরে তাপমাত্রা ১৩-১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ঘোরাফেরা করছে। এমন আবহাওয়া ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশার বাড়বাড়ন্তের জন্য অনুকূল নয় বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। তাও ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে সাফাই আর সচেতনতা প্রচারে প্রশাসনের ভূমিকা। জেলা প্রশাসনের একাংশ কর্তাই মানছেন, পঞ্চায়েত হোক বা পুর এলাকা, জমা জল, আবর্জনা সাফাইয়ে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪০৮। ৬ নভেম্বর সংখ্যাটা ৪২৩ ছুঁয়ে ফেলে। ১৮ নভেম্বর সংখ্যাটা বেড়ে হয় ৪৭৮। আর এই সময়ের মধ্যে তা আরও বেড়ে হয়েছে ৫৪০। আগে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা একলাফে যে এত বাড়েনি, তা মানছেন জেলার স্বাস্থ্য কর্তারাও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলছেন, “এই সময়ের মধ্যে নতুন করে কয়েকজন মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সকলেই চিকিত্সাধীন।’’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘উদ্বেগের কিছু নেই। পরিস্থিতি আয়ত্তেই রয়েছে।”
কেন মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে জেলায়? প্রশাসনের একাংশ দাবি করছেন, কোথাও জল জমিয়ে না রাখার জন্য প্রচার চালানো হলেও সে ভাবে সচেতনতা বাড়েনি। দিন কয়েক আগে হাল্কা বৃষ্টিতে ছাদে ফুলের টবে কিংবা ফাঁকা পাত্রে জল জমলেও অনেকেই তেমন গুরুত্ব দেননি। আর সেই জমা জলেই ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশা বংশবিস্তার করেছে। তার জেরেই ফের ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
সর্বত্র সাফাইয়ের কাজ ঠিকমতো না হওয়ায় কারণেও যে মশার বংশবৃদ্ধি ঠেকানো যায়নি, এমন অভিযোগও উঠছে। জেলায় খড়্গপুর শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ২০৯ জন। অথচ রেলশহরের রাস্তায় ঘুরলেই চোখে পড়বে, কোথাও নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় ভ্যাটেই জমছে জঞ্জাল আবার কোথাও নিকাশি নালাই মশার আঁতুড়ঘর। পিছিয়ে নেই সদর শহর মেদিনীপুরও। এখানে ২৪ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলেও নিয়মিত সাফাই অভিযান হয় না বলে অভিযোগ। এখনও পর্যন্ত খড়্গপুর-১ ব্লকে ৩২ জন, খড়্গপুর-২ ব্লকে ২০ জন, নারায়ণগড়ে ১৮ জন ও সবংয়ে ১৩ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘সব পঞ্চায়েত ও পুরসভাকে জমা জল এবং জঞ্জাল সাফাইয়ে আরও তত্পর হওয়ার কথা জানানো হয়েছে।’’ তিনি জানান, আবর্জনা তো নয়ই, কোথাও কোনও ভাবে জল জমতে না দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। মশানাশক রাসায়নিকও স্প্রে করা হচ্ছে।