শ্রমদিবস! জানেনই না হোটেলকর্মী রাজু

পাশের আরও একটি হোটেলে কর্মরত সাবাজপুটের অনাদি দাসের অভিযোগ, ‘‘ছুটি দূরে থাক, উল্টে ওই দিনে ভিড়ের ঠেলায় বিশ্রামের সুযোগটুকু  দেন না মালিকেরা।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দিঘা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৮ ০১:৫২
Share:

ছুটির খোঁজে। নিজস্ব চিত্র

সপ্তাহান্ত, বুদ্ধপূর্ণিমা, মে দিবস— টানা ছুটি। পর্টকদের ভিড় জমছে সৈকত শহর দিঘায়। সকলেই ব্যস্ত ছুটির আমেজ নিতে। কিন্তু ছুটি থেকে শতহস্ত দূরে ‘মে দিবসে’ও অন্য কাজে ব্যস্ত অজিত মাইতি, অনাদি দাস, রাজু দাসের মতো কয়েকশো ব্যক্তি।

Advertisement

খাতায় কলমে অজিত, অনাদিদের পরিচয় হোটেল কর্মী হিসাবে। যাঁরা সারা বছর এঁটো বাসন আর হোটেল পরিষ্কার করতেই ব্যস্ত থাকেন। বেঁচে থাকার রসদ খুজতে গিয়ে, যাঁদের জীবনে হারিয়ে গিয়েছে ‘মে দিবসের’ তাৎপর্য। শ্রম দিবসে তাঁদের একাংশের গলায় ‘বঞ্চনা’র সুর ধরা পড়লেও, তা নিরসনে প্রশাসন বা শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন ব্যর্থ বলেই অভিযোগ।

পুরনো দিঘার একটি হোটেলে ছোট থেকেই কাজ করেন কাঁথি-৩ ব্লকের করলদার রাজু দাস। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা মারা গেছে ছোট্ট বয়সে। তাই পড়া ছেড়ে হোটেলের কাজে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে বেতন বিধি আর কাজের নিরাপত্তা কিছুই নেই।’’ আর শ্রম দিবসের কথা শুনে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সেটা কি? কবে হয় সেটাই জানি না।’’

Advertisement

পাশের আরও একটি হোটেলে কর্মরত সাবাজপুটের অনাদি দাসের অভিযোগ, ‘‘ছুটি দূরে থাক, উল্টে ওই দিনে ভিড়ের ঠেলায় বিশ্রামের সুযোগটুকু দেন না মালিকেরা।’’ একই বক্তব্য নিউ দিঘার এক হোটেলকর্মী অজিত মাইতির। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিদিনের কাজের উপরে সংসার নির্ভর করে। এই অবস্থায় আমাদের জীবনে শ্রমদিবস বলে কিছু হয় না।’’

পর্যটন শহরে পর্যটকদের জন্য পরিষেবা সচল রাখতে কর্মীদের ছুটি দেওয়া হয় না বলে দাবি হোটেল মালিকদের। এ ব্যাপারে ‘দিঘা হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ছুটি বরাদ্দ থাকলেও মে দিবসে পর্যটকদের কথা ভেবেই ছুটি নেন না কর্মচারীরা। তাঁরা পরে সেই ছুটি নেন।’’

কর্মীদের শ্রমদিবসে ছুটির পরিবর্তে কাজ করা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলিও দুঃখ প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে ‘আইএনটিটিইউসি’র জেলা কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকার বলেন, ‘‘ওই ছুটির জন্য বহু আন্দোলন করেছি। কিন্তু তা নানা প্রতিবন্ধকতায় আটকে রয়েছে। এতে প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলগুলি প্রশ্ন তুলেছে।

প্রশাসনের অবশ্য দাবি, মে দিবসের ছুটি-সহ কর্মচারীদের নানা সমস্যা নিয়ে হোটেল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ শিশির অধিকারীর নেতৃত্বে গত ১৬ মার্চ মন্দারমণিতে ওই বৈঠক হয়েছিল। হোটেলে শ্রম আইন মানা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সহকারি শ্রম আধিকারিক আশিস মিত্র বলেন, ‘‘প্রশাসনিকভাবে বৈঠক হয়েছে। আগামী দিনে যাতে শ্রম আইন মাফিক কর্মীদের দাবি পূরণ হয়, সে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’’

হোটেল কর্মচারীদের অবশ্য প্রশ্ন, ‘‘প্রশাসনিক আশ্বাস মিললেও দুর্দশা কি আদৌও ঘুচবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন