এলইডির দাপটেও অম্লান দেওয়ালি পুতুল

সময়ের নিয়মেই পাল্টায় অনেক কিছু। যেমন, সেকালের প্রদীপ হার মেনেছে আধুনিক বৈদ্যুতিক আলোর কাছে। এ বার দীপাবলিতে এলইডির দাপট। রঙিন এই আলোর নানা নকশার কাছে প্রদীপ, ডিবরি, কুপি এমনকী মোমবাতির বাজারও মার খেয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু মেদিনীপুরের ঐতিহ্যশালী দেওয়ালি পুতুল। প্রতিযোগিতায় এখনও অন্যদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে সে!

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৫
Share:

মির্জাবাজার কুমোরপাড়ায় চলছে দেওয়ালি পুতুল তৈরি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

সময়ের নিয়মেই পাল্টায় অনেক কিছু। যেমন, সেকালের প্রদীপ হার মেনেছে আধুনিক বৈদ্যুতিক আলোর কাছে। এ বার দীপাবলিতে এলইডির দাপট। রঙিন এই আলোর নানা নকশার কাছে প্রদীপ, ডিবরি, কুপি এমনকী মোমবাতির বাজারও মার খেয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু মেদিনীপুরের ঐতিহ্যশালী দেওয়ালি পুতুল। প্রতিযোগিতায় এখনও অন্যদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে সে! দেওয়ালি উৎসবের সময় মেদিনীপুর ও তার আশপাশে এখনও এই পুতুল ব্যবহৃত হয়। মাঝে এক সময় বিক্রি তলানিতে এসে ঠেকেছিল। বছর কয়েক হল ফের বিক্রি বেড়েছে। মৃৎশিল্পী অরূপ পালের কথায়, “বৈদ্যুতিক আলোর দাপটে প্রদীপ-ডিবরির চাহিদা অনেকটাই কমেছে। দেওয়ালি পুতুল অবশ্য এখনও টিকে আছে। এ বছরও বিক্রি মোটের উপর ভালই হচ্ছে।”

Advertisement

দেওয়ালি পুতুল মূলত মেদিনীপুরেই তৈরি হয়। শহরের মির্জাবাজার কুমোরপাড়ার শতাধিক পরিবার এই পুতুল তৈরির কাজ করে। কুমোরপাড়া থেকে পুতুল যায় খড়্গপুর-সহ জেলার অন্যত্র। কী ভাবে তৈরি হয় এই পুতুল? মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, দেওয়ালি পুতুল তৈরিতে যেমন হাতের কাজ থাকে, তেমন চাক- ছাঁচেরও সাহায্য নেওয়া হয়। কোনও পুতুলে দু’টি হাত থাকে। আবার কোনও পুতুলে আবার আট- দশটিও হাত থাকে। এই পুতুলগুলোয় থাকে প্রদীপ বা ডিবরি বসানোর ব্যবস্থা। এক- একটির আবার এক-এক রকম উচ্চতা। দশ-বারো ইঞ্চি থেকে শুরু। দু’-তিন ফুটেরও হয়। অবশ্য এখন দু’-তিন ফুটের দেওয়ালি পুতুল খুব কমই তৈরি হয়। মৃৎশিল্পী অরূপবাবুর কথায়, “বেশি উচ্চতার পুতুল অনেকে কিনতে চান না। তৈরি করলে পড়েই থাকে। তাই কেউ বরাত দিলেই দু’-তিন ফুটের পুতুল তৈরি করি। সাধারণত, ছোট পুতুলই বেশি বিক্রি হয়।”

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এখন দেওয়ালি পুতুলের নীচের দিকের ঘাঘরার মতো অংশটিতে নানা নকশা করা হচ্ছে। থাকছে নানা রং। খোলাবাজারে কী দামে বিকোয় এই পুতুল? মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, পুতুলের আকার এবং সাজের উপর দাম নির্ভর করে। দশ-বারো টাকা থেকে শুরু। পঞ্চাশ-ষাট টাকা দামেরও পুতুল পাওয়া যায়। দু’-তিন ফুটের হলে দাম একটু বেশিই পড়ে। বর্তমানে, বৈদ্যুতিক আলোর দাপটে মাটির প্রদীপের দাপট এখন অনেকটাই ম্লান হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এলইডির চেন, ডিস্কো লাইটের চাহিদা। রঙিন কিংবা সুগন্ধী মোমবাতির সঙ্গে মোম প্রদীপও বিকোচ্ছে। এক সময় দেওয়ালি এলেই শহরের কুমোরপাড়ায় দম ফেলার ফুরসত থাকত না। একের পর এক বাড়িতে তৈরি হত প্রদীপ, ডিবরি, কুপি, দেওয়ালি পুতুল। এখনও প্রদীপ-ডিবরি তৈরি হয়। তবে অনেক কম।

Advertisement

কুমোরপাড়ার বাসিন্দা, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সঞ্জীতা দাসের কথায়, “আমাদের বাড়িতে দাদুর আমল থেকেই পুতুল তৈরি হয়ে আসছে দেখছি। পুতুলে রঙ করতে বেশ ভালই লাগে।” তাঁর কথায়, “এখন বৈদ্যুতিক আলোর চাহিদা বাড়ায় মাটির প্রদীপের চাহিদা কমেছে। তবে দেওয়ালি পুতুলের বাজার আছে।”

দীপাবলির সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই দেওয়ালি পুতুলের জন্য ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয় কুমোরপাড়ায়। গলির রাস্তার দু’দিকে পুতুলের পসরা সাজিয়ে বসেন কুমোরেরা। দিন তিন- চারেক আগে থেকেই ভিড়টা বেশি হয়। এক-একটি পুতুলের এক-এক রকম গড়ন। ক্রেতাদের পছন্দও এক-এক রকম। দেওয়ালি পুতুল মেদিনীপুরের নিজস্ব সৃষ্টি, ঐতিহ্যও বটে। কুমোরপাড়ার এক মৃৎশিল্পীর কথায়, “বহু দিন ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্য বজায় থাকুক, আমরা সকলে এটাই চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন