একশো দিনের কাজ, মনের কথা জানতে নাটকে ভরসা

গ্রামের চৌমাথায় গোল হয়ে বসে ছেলেবুড়োরা। অঙ্গন-নাটক দেখার আগ্রহে দলে-দলে আসছেন মহিলারাও। কিন্তু এ কেমন নাটক! কলকাতার নাটকের দলের চরিত্ররা তো সুদাম মান্ডি, মালতী হাঁসদা, চরণ মাহাতোদের মতো পরিচিত গাঁয়েরই লোকজনেরই মনের কথা বলছেন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

পথনাটিকায় একশো দিনের কাজের সুলুক সন্ধান। নিজস্ব চিত্র

গ্রামের চৌমাথায় গোল হয়ে বসে ছেলেবুড়োরা। অঙ্গন-নাটক দেখার আগ্রহে দলে-দলে আসছেন মহিলারাও। কিন্তু এ কেমন নাটক! কলকাতার নাটকের দলের চরিত্ররা তো সুদাম মান্ডি, মালতী হাঁসদা, চরণ মাহাতোদের মতো পরিচিত গাঁয়েরই লোকজনেরই মনের কথা বলছেন! একশো দিনের কাজ কীভাবে পেতে হয়, আবেদন করেও কাজ না পেলে কী করণীয়, জব কার্ড অন্যের কাছে রাখলে কীভাবে প্রতারিত হতে হয়- সেই কথাই শোনাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

নাটক দেখার সময় হই-হই করছেন দর্শকরা। এতো তাঁদের মনের কথা! যন্ত্রণার কথা! প্রত্যাশার কথা! নাটক চলাকালীন মাঝপথে নিজেদের কথা বলতে চান অনেক গ্রামবাসী। এক প্রৌঢ়ার জব কার্ড তো সেই কবেই রয়েছে ‘পঞ্চায়েতের ঘরে’। অভিযোগ, গত বছর সাকুল্যে ৫ দিন কাজ পেয়েছিলেন। পঞ্চায়েতের ক্ষমতা বদলের পরে এখনও কাজ পাননি। একশো দিনের কাজ নিয়ে বাসিন্দদের মনের কথা জানতে এ বার নাটকের দলকে মাঠে নামিয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসন। আপাতদৃষ্টিতে পথ নাটিকার মাধ্যমে প্রকল্প নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে বাসিন্দাদের। কিন্তু নাটক চলাকালীন বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে গ্রামবাসীও জানাচ্ছেন নিজেদের বাস্তব-অভিজ্ঞতার কথা। একশো দিনের প্রকল্পের এক আধিকারিক মানছেন, এর ফলে সমস্যার গভীরে যাওয়া সহজ হচ্ছে। নাটকের দলের কাছে গ্রামবাসীও মন খুলে কথা বলছেন।

ঝাড়গ্রাম জেলায় ২০১৭-২০১৮ সালে গড়ে ৫৪ দিন একশো দিনের কাজ দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি। এক লক্ষ কুড়ি হাজার জব কার্ড হোল্ডারকে কাজ দেওয়া হয়েছিল। এক ব্লক আধিকারিক জানাচ্ছেন, গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি সংসদে খুব ভাল কাজ হয়েছে। অনেকে কাজও পেয়েছেন। পরে পরিদর্শনের সময় জানা গেল অনেক গরিব মানুষ কাজই পাননি। কী ভাবে কাজ পেতে হয়, সেটা না জানার ফলে তাঁরা সরাসরি পঞ্চায়েতে আবেদন করেননি। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ভরসা করেছিলেন। তাঁরা কাজ পাননি। উল্টে বার বার একই পরিবারের লোকজন কাজ পেয়েছেন।

Advertisement

কারও মনে যেন কোনও ক্ষোভ না থাকে, সে ব্যাপারে প্রশাসনকে সব সময় সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অঙ্গন নাটকের মাধ্যমে সচেতনতা-প্রচার ও মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের কাজ খুব ভাল ভাবে হচ্ছে বলে দাবি প্রশাসনের। প্রশাসনের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবর্ষ শেষ হতে আর বাকি তিন মাস। এখনও পর্যন্ত জেলার ৯৫ হাজার জব কার্ড হোল্ডারকে ৩৩ দিন কাজ দেওয়া গিয়েছে। প্রশাসনের লক্ষ্য, আগামী তিন মাসের মধ্যে গড় কাজ দেওয়ার পরিসংখ্যানটা ৭০ দিনে উন্নীত করা। আরও বেশি পরিবারকে কাজ দেওয়াটাও লক্ষ্য। সে জন্যই গ্রামে গ্রামে প্রচার চলছে। জেলার ৭৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে পথ-নাটকের মাধ্যমে এই সচেতনতা-প্রচার কর্মসূচি হয়েছে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ সম্পর্কে এলাকাবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি, তাঁদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য এই কর্মসূচি চলছে। অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন