কলে বাঁধা ছাগল, জল আনতে পাড়ি সদরে

গ্রামে পানীয় জলের চারটি টাইম কল রয়েছে। সেখান থেকে জল পড়ে না। বাঁধা থাকে গৃহস্থের ছাগল। অগত্যা কিলোমিটার দু’য়েক রাস্তা উজিয়ে ব্লকসদর বেলপাহাড়ি থেকে পানীয় জল সংগ্রহ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন ভেদাকুই গ্রামের বাসিন্দারা।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০১:২৫
Share:

টাইম কলে বাঁধা রয়েছে ছাগল। দূর থেকে জল আনছেন মহিলারা। নিজস্ব চিত্র।

গ্রামে পানীয় জলের চারটি টাইম কল রয়েছে। সেখান থেকে জল পড়ে না। বাঁধা থাকে গৃহস্থের ছাগল। অগত্যা কিলোমিটার দু’য়েক রাস্তা উজিয়ে ব্লকসদর বেলপাহাড়ি থেকে পানীয় জল সংগ্রহ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন ভেদাকুই গ্রামের বাসিন্দারা। প্রায় মাস চারেক ধরে এমনই পরিস্থিতি। পরিস্রুত জলের অভাবে বর্ষায় পেটের রোগে ভুগছেন বাসিন্দারা। দফায় দফায় প্রশাসনকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। চরম সমস্যায় পড়েছেন গ্রামের ১৯৭ টি পরিবার ভুক্ত প্রায় সাতশো বাসিন্দা।

Advertisement

জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের বেলপাহাড়ি জল প্রকল্প থেকে নিয়মিত জল সরবরাহের দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু সেই জল ভেদাকুই গ্রামে এসে পৌঁছচ্ছে না কেন? প্রশাসনিক সূত্রের সাফাই, শিলদা থেকে শুকজোড়া হয়ে বেলপাহাড়ি যাওয়ার রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে ভুর্গভস্থ পানীয় জলের পাইপ লাইন ‘অবরুদ্ধ’ করে ফেলেছেন ঠিকাদারের লোকজন। আর তার ফলে, ভেদাকুই গ্রামের টাইম কলে জল পড়ছে না। জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের আধিকারিকরা ঠিকাদারকে তলব করে ধমক দিয়েছেন। ব্যস ওই পর্যন্তই।

ভেদাকুই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, পানীয় জলের টাইম কলের স্ট্যান্ড-পোলে ছাগল বেঁধে রেখেছেন গ্রামবাসী। হাঁড়ি-কলসি মাথায় বেলপাহাড়ি থেকে পানীয় জল নিয়ে ফিরছিলেন মালতী মাহাতো, তপতী মাহাতো, রিম্পা মাহাতোরা। ঝাঁঝিয়ে উঠে মালতীদেবীরা বললেন, “দীর্ঘদিন ট্যাপের জল আসছে না। পাতকুয়োর জল খাওয়ার অযোগ্য। তাই বাধ্য হয়েই অনেকটা পথ হেঁটে গিয়ে জল নিয়ে আসতে হচ্ছে।” স্থানীয় আশাকর্মী কনকলতা মাহাতো জানালেন, সবার পক্ষে দূর থেকে পরিস্রুত জল আনা সম্ভব হয় না। তাই অনেকে পাতকুয়ো ও পুকুরের জল ব্যবহার করেন। এর ফলে এলাকায় পেটের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

Advertisement

অপরিচিত সাংবাদিককে দেখে লাঠি ঠুকে হাজির হলেন বৃদ্ধ দিল্লেশ্বর মাহাতো। জানতে চাইলেন, টাইম কল কবে সারানো হবে। দিল্লেশ্বরবাবুর আশঙ্কা, “বর্ষার মরসুমে টাইম কলে পরিশ্রুত জল না পাওয়া গেলে তো গোটা গ্রামে পেটের রোগ ছড়াবে!” স্থানীয় যুবক কল্যাণ মাহাতো, প্রদ্যোত মাহাতোরা বলেন, “উন্নয়নের রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে আমাদের তেষ্টার জলটাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক মহলে অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু কারও হেলদোল দেখছি না।”

জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের ঝাড়গ্রাম মহকুমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সুবীর ঘোষ বলেন, “ওই এলাকায় রাস্তার কাজ করতে গিয়ে পূর্ত দফতরের ঠিকাদারের লোকজন পাইপ লাইন নষ্ট করে দিয়েছেন। ভেদাকুই গ্রামে জল সরবরাহের জন্য নতুন করে পাইপ লাইন বসাতে হবে। আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।” জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “এমন হলে ঠিকাদারকে সতর্ক করা হবে। খোঁজ নিয়ে দেখব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন