বছর সতেরোর মেয়েটি স্কুল বাড়ির সিঁড়ি টপকে ছুটছে ছাদের দিকে। তাকে তাড়া করেছে তিন যুবক। শুধু ওই মেয়েটিই নয়, আতঙ্কে চিৎকার করছে স্কুলের অন্য ছাত্রীরাও। ভ্রূক্ষেপ নেই যুবকদের। তাড়া খেয়ে মেয়েটি বাঁচতে ঢুকে পড়েছে স্কুলের পাশের একটি দোকানে। সেখানে ঢুকেও অকথ্য গালিগালাজ করে মেয়েটিকে টেনে তুলে নিয়ে যেতে চাইছে ওই যুবকেরা।
মিনিট তিনেকের ঘটনা। তবে বলিউডি চিত্রনাট্য নয়। সোমবার টিফিনের সময়ে ঘাটালের একটি স্কুলে এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। পরে অবশ্য মোটর বাইক চড়ে আসা ওই তিন যুবকের একজনকে ধরে ফেলে এলাকার মানুষ। সঞ্জয় সামন্ত নামে ওই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ বাপন সামন্ত নামে মূল অভিযুক্তকেও গ্রেফতার করে। তৃতীয় প্রসেনজিৎ সামন্ত অবশ্য পলাতক। তাদের নামে ঘাটাল থানায় নাবালিকাকে অপহরণ ও শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পুলিশের দাবি, ওই তিন যুবক মদ্যপ অবস্থায় মেয়েটির উপর হামলা চালায়। কিন্তু কেন এই হামলা? বাপন বিয়ে করতে চায় নাবালিকাকে, নারাজ সে।
মঙ্গলবার ধৃতদের ঘাটাল আদালতে হাজির করানো হলে তাদের তিন দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। নাবালিকার মেডিক্যাল টেস্টও করা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার দোলই বলেন, “তিন চার মিনিটের মধ্যে স্কুলে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল। রাতে আমি থানায় মামলা করেছি।” যে দোকানে আশ্রয় নিয়েছিল কিশোরী, তার মালিক বলেন, ‘‘হিন্দি সিনেমার দৃশ্য যেন চোখের সামনে দেখলাম। আমারই এক বন্ধুর মেয়েটি। তার সঙ্গে যে এমন হতে পারে ভাবতেও পারিনি।’’
নাবালিকার পরিবার সূত্রের খবর, এক সময় অভিযুক্ত বাপন সামন্তের সঙ্গে বিয়ের জন্য কথাবার্তা হয়েছিল মেয়েটির। কিন্তু সে বিয়েতে রাজি হয়নি মেয়েটি। তার বাবার কথায়, “ছেলেটি সোনার কাজ করে দিল্লিতে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ছেলে তেমন ভাল নয়। তাই কথাবার্তা আর এগোইনি। তখন থেকেই ফোনে আমাদের উত্যক্ত করত বাপন। কিন্তু পুলিশে অভিযোগ করিনি। বুঝিনি এতখানি ঘটে যাবে!”
ঘটনার আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেনি স্কুলের ছাত্রীরা। অভিভাবকরাও প্রশ্ন তুলছেন স্কুলের নিরাপত্তা নিয়ে। খোলা মাঠ পেরিয়ে সোজা উঠে যাওয়া যায় স্কুলের বারান্দায়। মূল ফটক তো দূরের কথা, সামান্য পাঁচিলের ব্যবস্থাও নেই। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ছাত্রীদের অভিভাবকেরা। এরপর আরও কত ছাত্রীর সঙ্গে এমন হতে পারে, আশঙ্কায় ভুগছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষিকার কথায়, “খবরের কাগজে মাঝে মধ্যে এ রকমের ঘটনা পড়েছি। আমাদের স্কুলে কখনও হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। পুলিশ জানিয়েছে, প্রসেনজিতের খোঁজে তদন্ত চলছে।