যত্রতত্র আবর্জনায় অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, প্রায় দেড়শো বছরের প্রাচীন এই জনপদে আজ পর্যন্ত শহরের আবর্জনা ফেলার কোনও স্থায়ী জায়গা নেই। পুরসভা গঠনের পরে তারাও এ ব্যাপারে তৎপর হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০২:২২
Share:

বিক্ষোভ: পুরসভার ময়লা ফেলার গাড়ি আটকে দিলেন বাসিন্দারা। শুক্রবার। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

স্বচ্ছ ভারত হোক বা নির্মল বাংলা, কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারের পক্ষ থেকেই মাঠে-ঘাটে, রাস্তার ধারে খোলা জায়গায় আবর্জনা না ফেলার জন্য জোর প্রচার চলছে। নির্মল জেলা হিসেবে রাজ্য সরকারের পুরস্কারও পেয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। অথচ সেই জেলারই সদর তমলুকে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা নিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় মানুষ। তাঁদের সেই বিক্ষোভ পুরসভারই বিরুদ্ধে।

Advertisement

স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, প্রায় দেড়শো বছরের প্রাচীন এই জনপদে আজ পর্যন্ত শহরের আবর্জনা ফেলার কোনও স্থায়ী জায়গা নেই। পুরসভা গঠনের পরে তারাও এ ব্যাপারে তৎপর হয়নি। যার ফলে যত্রতত্র নোংরা আবর্জনা ফেলা চলছেই। এমনকী পুরসভাও কখনও ফাঁকা মাঠে, কখনও রাস্তার ধারে জঞ্জাল ফেলছে। এর ফলে গোটা শহর নোংরা-আবর্জনায় ভরার পাশাপাশি দূষণও ছড়াচ্ছে। অথচ পুরপ্রশাসন নির্বিকার। পুরবাসীর অভিযোগ যে অমূলক নয়, তা দেখা গেল ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডের দক্ষিন চড়া শঙ্কর আড়া এলাকায় বাইপাস রাস্তার ধারে জমে উঠছে আবর্জনার পাহাড়। পাশেই রূপনারায়ণ নদ। জোয়ার এলেই জমে থাকা আবর্জনা ভেসে যাচ্ছে নদের জলে। ওই এলাকায় প্রায় ১০০টি পরিবারের বাস। চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যেই রয়েছেন তাঁরা।

শুক্রবার সকালে পুরসভার ময়লা ফেলার কয়েকটি গাড়ি বাইপাস রাস্তার ধারে আবর্জনা ফেলতে এলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মানুষ। ময়লার গাড়ি ঢোকা রুখতে বাঁশ দিয়ে আটকে দেওয়া হয় রাস্তা। শুরু হয় গাড়ি চালকদের সঙ্গে বচসা। গোলমালের জেরে শেষমেশ ময়লাভর্তি গাড়িগুলি ফেলেই পালিয়ে যান চালকেরা। খবর পেয়ে হাজির হন পুরসভার কর্মী তথা শহর তৃণমূলের সভাপতি দিব্যেন্দু রায়। তাঁকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বাসিন্দারা। শেষ পর্যন্ত দিব্যেন্দুবাবু দূষণ ঠেকাতে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা গৃহবধূ পার্বতী রায়, কৃষ্ণা চক্রবর্তী, রীতা ওঝার অভিযোগ, দিনভর অন্তত ৩০-৪০টা গাড়ী রাস্তার ধারে ময়লা ফেলে যাচ্ছে। বর্ষায় তা ধুয়ে আরও ভয়াবহ অবস্থা। জমে থাকা আবর্জনার জন্য বড় বড় পোকামাকড় ঝুকছে বাড়িঘরে। তার উপর দুর্গন্ধে ঘরে টেঁকা দায়। আত্নীয়-স্বজনকে বাড়িতে ডাকা যায় না। শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষিকা দীপিকা ত্রিপাঠীর কথায়, ‘‘দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যায় না। তার ওপর রোগ ছড়ানোর ভয় তো আছেই। অনেক ছাত্রছাত্রী চামড়ার অসুখে ভুগছে।’’ স্থানীয় মানুষের দাবি, শহরের বাইরে ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করে সেখানে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করুক পুরসভা।

১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্নিগ্ধা মিশ্র বলেন, ‘‘রূপনারায়ণের তীরে প্রায় তিন একর জায়গায় অস্থায়ী ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ভাঙনের ফলে প্রায় দু’একর জমি নদীতে তলিয়ে যায়। মাত্র এক একর জায়গা রয়েছে। এত অল্প জায়গায় সারা শহরের আবর্জনার চাপও বেশি। তবে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’’

পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, “সমস্যা যে গুরুতর সন্দেহ নেই। বাসিন্দাদের ক্ষোভ স্বাভাবিক। নতুন করে বড় মাপের ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির উপযুক্ত জমি আমাদের হাতে নেই। তবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা চলছে। জায়গা কিনেই ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন