হনুমানের আতঙ্ক তাড়াতে পথে নামলেন বাসিন্দারাই

হনুমানের তাণ্ডব এতটাই বেড়েছে যে আতঙ্কে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর ছেড়ে বেরোচ্ছেন না বাসিন্দারা। মাস দুয়েক ধরে এমনই অবস্থা পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না ব্লকের বলাইপণ্ডা এলাকার দোনাচক, সুদামপুর, পরমানন্দপুর ও মগরা গ্রামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৭ ১০:১০
Share:

অভিযান: তির-ধনুক নিয়ে হনুমানের খোঁজে। নিজস্ব চিত্র

রাস্তায় হাঁটার সময় কিংবা বাড়ির সামনে পুকুরঘাটে যাওয়ার সময় আচমকা চড়াও হচ্ছে ওরা। কাউকে কাম়ড়ে, কাউকে আঁচড়ে দিচ্ছে। কচি-কাঁচা থেকে তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বাদ যাচ্ছেন না কেউই।

Advertisement

হনুমানের তাণ্ডব এতটাই বেড়েছে যে আতঙ্কে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর ছেড়ে বেরোচ্ছেন না বাসিন্দারা। মাস দুয়েক ধরে এমনই অবস্থা পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না ব্লকের বলাইপণ্ডা এলাকার দোনাচক, সুদামপুর, পরমানন্দপুর ও মগরা গ্রামে। ভীত-সন্ত্রস্ত ওই সব গ্রামের মানুষ দ্বারস্থ হন বন দফতরের। বন দফতরের লোকজন হনুমান তাড়ানোর চেষ্টাও করলেও হনুমানের উপদ্রব থামেনি বলে অভিযোগ।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ২০-২৫টি হনমানের একটি দল গত কয়েক মাস ধরে এলাকায় রয়েছে। ওই দলেরই একটা বড় হনুমান সম্ভবত দলের সর্দার লোকজনদের আক্রমণ করছে। ইতিমধ্যেই তার কামড়ে বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন। দু’একজনকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়েছে। অবস্থা এমন যে বাচ্চাদের নিয়ে রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছেন বাবা-মায়েরা। বন দফতর সূত্রে খবর, ওই এলাকায় হনুমানের একটি দল তাণ্ডব চালাচ্ছে। দলের সর্দারকে ধরার চেষ্টা হলেও তার খোঁজ মেলেনি।

Advertisement

এই অবস্থায় অতিষ্ঠ গ্রামবাসীরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়েছেন হনুমান তাড়াতে। রবিবার সকাল থেকেই ওই চারটি গ্রামের লোকজন হাজির হন দোনাচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। এ দিন গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থেকে হনুমান তাড়ানোয় দক্ষ আদিবাসীদের একটি দলকে নিয়ে আসেন। হাতি তাড়ানোর হুলা পার্টির মতো এদিন ওই দলটি লাঠি, চকলেট বোম ও তির-ধনুক, গুলতি নিয়ে এলাকায় অভিযান চালায়। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত হনুমানের দলটির সর্দারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে দলটি জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে তমলুকেও হনুমানের একটি দলকে তাড়াতে এ ধরনের অভিযান করে বন দফতর।

অভিযানের উদ্যোক্তাদের একজন দোনাচক গ্রামের বাসিন্দা পেশায় হাইস্কুল শিক্ষক বিশ্বজিৎ দত্তগুপ্ত জানান, কয়েক মাস ধরেই এলাকায় হনুমানের একটি দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা খেতের কলা, পেয়ারা, চাল-কুমড়া খেয়ে সাফ করছিল। ক্ষতি হলেও লোকজনের তেমন ক্ষোভ ছিল না। কিন্তু সপ্তাহ তিনেক আগে দলের একটি হনুমান বেশ কয়েকজনকে কামড়ে, আঁচড়ে দেয়।

বন দফতরের পাঁশকুড়া রেঞ্জের অফিসার গৌরীশঙ্কর দাস বলেন, ‘‘দোনাচক এলাকায় আক্রমণকারী হনুমানটিকে বাগে আনতে কয়েক দিন আগে শিকারি নিয়ে বনকর্মীরা গিয়েছিলেন। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও সেটিকে চিহ্নিত করা যায়নি। ফলে ফিরে আসতে হয়।’’ তিনি জানান, মনে হচ্ছে দলছুট হওয়ার কারণেই হনুমানটি এমন আচরণ করছে। তবে গ্রামবাসীরা যদি তাকে চিহ্নিত করতে পারেন, তা হলে বনকর্মীদের কাজে সুবিধা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন