ঠাঁই: পুরনো ভবনের প্রসূতি বিভাগের মেঝেতে সদ্যোজাত-রোগী। —নিজস্ব চিত্র।
সঙ্কীর্ণ বারান্দার মেঝেতে সদ্যোজাতদের নিয়ে গাদাগাদি হয়ে পড়ে রয়েছেন প্রসূতিরা। সামান্য হাঁটাচলার করার জায়গা দিয়ে কোনও রকমে তাঁদের গা বাঁচিয়ে যাতায়াত করছেন অন্য রোগীর পরিজনেরা।
ছবিটা এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের। যেখানে নোংরা মেঝেতেই প্লাস্টিকের উপর শুয়ে রাতের পর রাত কাটাতে হয় সদ্যজাতদের। দুর্গন্ধযুক্ত চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাঁদের সন্তাদের সংক্রমণ হওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন মায়েরা। গত কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যার অভাবেই এমন পরিস্থিতি বলে অভিযোগ।
এগরা মহকুমা হাসপাতাল সম্প্রতি উন্নীত হয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। বিভিন্ন বিভাগ নতুন ভবনে স্থানান্তিরত হলেও এগরা মহকুমা হাসপাতালের পুরনো ভবনেই থেকে গিয়েছে প্রসূতি এবং শিশু বিভাগ। প্রসূতি বিভাগে স্বাভাবিক প্রসবের সঙ্গ অস্ত্রোপচারের পরিষেবা যুক্ত হওয়ায় রোগীর চাপ আগের থেকে অনেক বেড়েছে। এগরা মহকুমা ছাড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু রোগীও এখানে আসছেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এখন প্রতি মাসে ৯০০ শিশুর জন্ম হয় হাসপাতালে। এগরা মহকুমা হাসপাতালের দু’টি তলায় প্রসূতি বিভাগের জন্য ১৭৫টি শয্যা রয়েছে। সম্প্রতি প্রথম তলার সংস্কারের কাজ করছে পূর্ত দফতর। ফলে ওই তলার রোগীদের চাপ এসে পড়ছে নীচের তলার প্রসূতি বিভাগে।
নীচে প্রসূতি বিভাগে ৮০ জন রোগীর জায়গায় ১৫০ জন প্রসূতিকে রাখতে হচ্ছে। সেই চাপ সামালাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল। একাধিক প্রসবতি শয্যা না পেয়ে সদ্যজাতদের নিয়েই নোংরা মেঝেতে রাত কাটাচ্ছেন। সরকারি সুবিধা পেতে কার্যত এই সমস্যা রোগীর পরিজনেরা মুখ বুজে মেনে নিচ্ছেন। অমিতাভ ভুঁইয়া নামে এক রোগীর পরিজনের বক্তব্য, ‘‘অস্বাস্থ্যকর ভাবে পড়ে রয়েছেন মা এবং সদ্যোজাত। চিকিৎসকেরা রোগী এবং শিশুর কাছে আসেন না। উল্টে হাতে স্যালাইনের বোতল নিয়ে প্রসূতিদের চেম্বারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসক দেখান। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হলেও রোগীর প্রতি দায়ব্ধতা নেই চিকিৎসক, নার্সদের।’’
এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার গোপাল গুপ্তা বলেন, ‘‘সংস্কারের কাজের জন্য এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। আশা করি দু’মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে। শয্যার অভাবে মেঝেতে যে সব সদ্যোজাত এবং মায়েরা রয়েছেন, তাঁদের সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। তবে সেই দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। চিকিৎসকেরা নিয়মিত শিশুর পরীক্ষা করেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রসূতিদেরও চেম্বারে এসে পরীক্ষা করাতে হয়।’’ সুপারের বক্তব্য, ‘‘গ্রামের এলাকায় প্রাথমিক এবং ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সন্তান ডেলিভারি করানো হয়। সুপার স্পেশ্যালিটির নাম শুনে রোগীরা সেখানে না গিয়ে সরাসরি এগরা চলে আসছেন। এতে একটা চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।’’
এ ব্যাপারে মতামত জানতে ফোন করা হয়েছিল মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাই মণ্ডলকে। তবে তাঁর ফোন সুইচড অফ পাওয়া গিয়েছে।