elephant attack

বৌভাতের মণ্ডপের পাশে হাতির দল

ঝাড়গ্রামের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা মাম্পি সিংহয়ের সঙ্গে জোয়ালভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা তন্ময় সিংহয়ের বিয়ে হয়েছে শুক্রবার। শনিবার রাতে ছিল বৌভাত।

Advertisement

রঞ্জন পাল

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ ০৯:৪৮
Share:

মণ্ডপের পাশে এই বাঁশবাগানেই হাজির হয়েছিল হাতির দল। নিজস্ব চিত্র  Ranjan Pal

ঘড়ির কাঁটা সোয়া একটা। চলছে বৌভাতের অনুষ্ঠান। বাজছে সানাই। পরিবারের লোকজন ও কনেযাত্রীরা সবে খেতে বসেছেন। বর-বৌয়ের তখনও খাওয়া হয়নি। হঠাৎই মণ্ডপ লাগোয়া বাঁশবাগান থেকে এল হাতির ডাক। প্রাণ বাঁচাতে খাওয়া ছেড়ে মণ্ডপ ছেড়ে দৌড় দিলেন অনেকে। শনিবার গভীর রাতে এমনই ঘটনার সাক্ষী রইল ঝাড়গ্রাম ব্লকের জোয়ালভাঙ্গা গ্রাম।

Advertisement

ঝাড়গ্রামের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা মাম্পি সিংহয়ের সঙ্গে জোয়ালভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা তন্ময় সিংহয়ের বিয়ে হয়েছে শুক্রবার। শনিবার রাতে ছিল বৌভাত। বাড়ির পাশে বাঁশবাগানের কাছে হয়েছিল মণ্ডপ। শুক্রবার থেকেই জোয়ালভাঙা গ্রামে হাতির উৎপাত শুরু হয়। শুক্রবার রাতে পঞ্চানন মুর্মু নামে এক গ্রামবাসীর মাটির বাড়ির দেওয়াল ভেঙে ভিতরে ঢুকে রান্নাঘরে থাকা খাবার খায় হাতি। তছনছ করে দেয় আশপাশ। শনিবার হাতির দলটি ছিল জোয়ালভাঙ্গা সংলগ্ন ভাওদা গ্রামে। তাই আশঙ্কা ছিলই। হাতির দাপাদাপির জন্য কনে যাত্রীদের ঘুরপথে আসতে হয়। তন্ময় বলেন, ‘‘হাতি থাকায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের আমরা গিয়ে নিয়ে এসেছি। কনেযাত্রী আসতে প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গিয়েছে।’’

তবে তারপরেও বিভ্রাট আটকানো গেল না। কয়েকটি হাতি বিয়ে বাড়ির মণ্ডপ সংলগ্ন বাঁশবাগানে চলে আসে। সানাইয়ের আওয়াজে প্রথমে তাদের উপস্থিতি বোঝা যায়নি। তবে কিছুপরেই কানে আসে ডাক। মুর্হূতের মধ্যে বদলে যায় পরিস্থিতি। রবিবার গ্রামে যেতে দেখা গেল তন্ময়ের আত্মীয়রা একে একে বাড়ি ছাড়ছেন। সোদপুর থেকে ওই বিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন মলয় সিংহ রায়, সংবেদী সিংহ রায়, মুক্তি সিংহ রায়রা। তাঁরা বললেন, ‘‘৫-৬ বছর অন্তর আমরা এখানে আসি। এবার বিয়ে বাড়িতে কয়েকদিন থাকার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু বৌভাতের রাতে হাতি গ্রামে ঢুকে পড়ল। এত হাতি কোনওদিন দেখিনি। ভয়ে সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। তাই সকালেই বাড়ি চলে যাচ্ছি।’’

Advertisement

তন্ময়ের বাবা তপন সিংহের আক্ষেপ, ‘‘৫০০ জন আমন্ত্রিত ছিলেন। ৬৫ জন কনেযাত্রী-সহ মোট ২৭০ জন খেয়েছেন। বেশিরভাগই হাতির ভয়ে আসতে পারেননি। অনেকে খেতে বসে হাতির ডাক শুনে উঠে গিয়েছেন। প্রচুর খাবার নষ্ট হয়েছে।’’ বরের মা ববিতাও বলেন, ‘‘কনেযাত্রী-সহ পরিবারের লোকজন খাচ্ছিল। হঠাৎই পাশে হাতি চলে আসে। ভাগ্যিস খাবার জায়গায় ঢুকে যায়নি।’’

বিয়ে বাড়িতে তেমন ক্ষতি না করলেও শনিবার রাতে জোয়ালভাঙা গ্রামের ছ’টি মাটির বাড়ি ভেঙে দিয়েছে হাতির দল। দেওয়াল চাপা পড়ে সাইকেল ও বাসনপত্র সহ নানা জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীরা গভীর রাতেই বিষয়টি বন দফতরকে জানান। তারপরে রবিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বাঁদরভুলার বিট অফিসার চিত্তরঞ্জন মাইতি ওই গ্রামে আসেন। তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ চলে। দুপুর তিনটে নাগাদ ওই গ্রামে আসেন রেঞ্জ অফিসার দেবজ্যোতি ভৌমিক। পৌঁছয় পুলিশ। রেঞ্জ অফিসার গ্রামবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেন। সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘেরাও বিক্ষোভ উঠে।

রবিবারও ঝাড়গ্রাম ডিভিশনে ১০৫টি হাতি ছিল। তার মধ্যে জোয়ালভাঙ্গা জঙ্গলে ২০টি ও ভাওদা এলাকায় ১০টি হাতি ছিল। ঝাড়গ্রামের ডিএফও পঙ্কজ সূর্যবংশী বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রামে অনেক হাতি রয়েছে। তারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এলাকা ছাড়তে চাইছে না। তাই সরানো যাচ্ছে না। তবুও আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন