তছনছ: হাতির তাণ্ডবে ভেঙেছে ঘর। নিজস্ব চিত্র
তখন সোমবার রাত সাড়ে ১১টা। সকলেই নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত। সেই সময় দাঁতালের হানায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বাড়ি। প্রাণ বাঁচাতে যে যে দিকে পারলেন, ছুটলেন। নতুন বছরের প্রথম আলো যখন ফুটল, দেখা গেল দলমার হাতির দল গ্রাম দাপিয়ে ভেঙে দিয়েছে ১৭টি মাটির বাড়ি। এর মধ্যে ৮টি বাড়ি একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়েছে হাতিরা।
সোমবার রাতে ঝাড়গ্রামের সর্ডিহা অঞ্চলের বেদাকোলা গ্রামে হানা দিয়েছিল দলমার পাল। বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে হুলাপার্টির তাড়া খেয়ে মেদিনীপুর বন বিভাগের চাঁদড়া রেঞ্জ এলাকা থেকে দলমার হাতির পালের প্রায় ৭০-৮০টি হাতি ঝাড়গ্রামের দিকে রওনা দেয়। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ পালের প্রায় তিরিশটি হাতি ঢুকে পড়েছিল বেদাকোলা গ্রামে। এরপরই খাবারের খোঁজে একের পর এক বাড়িতে হানা দেয় দাঁতালরা। ঘণ্টা তিনেক ধরে চলে তাণ্ডব।
গ্রামের বাসিন্দা ললিন দোলই, সাগর ধাউড়িয়া বলছিলেন, ‘‘শীতের রাতে গ্রামের অনেকেই তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। আচমকা হাতি ঢুকে পড়ায় পড়ি-মরি করে যে যে দিকে পেরেছি, ছুটে পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছি।’’ হাতিগুলি এরপর কংসাবতী নদী পেরিয়ে দুর্গাপুর গ্রামের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দুর্গাপুরের দিকে ব্যারিকেড করে দেন স্থানীয়রা। বাধা পেয়ে হাতির দলটি মণিদহ দিয়ে গুড়গুড়িপালের দিকে ফিরে চলে যায়।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে গ্রামে আসেন বিজেপি-র ক্ষমতাসীন সর্ডিহা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নমিতা রায়। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলার শালবনি মণ্ডল সভাপতি ত্রিপদীপ্রসাদ শীট-ও গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রধান নমিতাদেবী বলেন, ‘‘আমরা সদ্য পঞ্চায়েতের দায়িত্বভার নিয়েছি। পঞ্চায়েতের তহবিলে টাকা খরচের অনুমতি এখনও পাইনি। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য বন দফতর ও ব্লক প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’’ ত্রিপদীপ্রসাদবাবু বলেন, ‘‘প্রশাসনিকস্তর থেকে সাহায্য আসতে দেরি হলে দলীয় উদ্যোগেই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অস্থায়ী ছাউনির ব্যবস্থা করা হবে। এ দিন দুপুরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলেইচ্চি বলেন, ‘‘হাতিরা গ্রামে ঢুকে কিছু মাটির বাড়ি ভেঙেছে। ক্ষতির পরিমাণ ক্ষতিয়ে দেখে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’