পুজোর মুখেও বাজার ফাঁকা ঘাটালে

পুজোর আর ক’দিন বাকি। কিন্তু এখনও ঘাটালে পুজোর বাজার জমেনি! বহু আগে থেকেই নতুন পোশাক থেকে জুতো মজুত করে দোকানে সাজিয়ে প্রস্তুত বিক্রেতারা ।কিছু দোকানে টুকটাক পুজোর কেনাকেটা চললেও-পুজোর বাজার বলতে যা বোঝায় ঘাটালে এখনও তা জমেনি।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৪
Share:

হাতে গোনা খদ্দেরই ভরসা। দাসপুরে কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

পুজোর আর ক’দিন বাকি। কিন্তু এখনও ঘাটালে পুজোর বাজার জমেনি!

Advertisement

বহু আগে থেকেই নতুন পোশাক থেকে জুতো মজুত করে দোকানে সাজিয়ে প্রস্তুত বিক্রেতারা ।কিছু দোকানে টুকটাক পুজোর কেনাকেটা চললেও-পুজোর বাজার বলতে যা বোঝায় ঘাটালে এখনও তা জমেনি। অথচ, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে কেনাকাটার উপর নানা পুরস্কারের ঘোষণাও করছেন দোকানদাররা। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজছে না। স্বাভাবিক ভাবেই কপালে ভাঁজ দোকান মালিকদের।

পশ্চিম মেদিনীপুরের এই জনপদটি ঘাটাল মহকুমার সদর শহর। ফি বছর শুধু ঘাটাল মহকুমা নয়, হুগলি ও হাওড়া জেলার বেশ কিছু গ্রামের মানুষও পুজোর আগে কেনাকেটা করতে ভিড় জমান ঘাটালে। কৃষি প্রধান এই এলাকার মানুষ কেউ কেউ পুজোর সময়ই সারা বছরের জামা-কাপড় কিনে নিতেন। এ দিকে দিনে দিনে বেড়েছে দোকানের সংখ্যাও। সঙ্গে একাধিক আধুনিক শপিং মলও। কিন্তু কোথাওই ক্রেতার দেখা নেই।

Advertisement

ছবিটা এমন কেন?

সূত্রের খবর, এলাকার মানুষ সাধারণত চাষবাসের উপর নির্ভরশীল। কয়েক দিন আগেই দু’বার জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল ঘাটালের বহু এলাকা। বন্যায় খরিফ থেকে সব্জি ও ফুলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। চাষিদের নতুন করে চড়া দামে বীজ কিনে আমন ধানের চাষ থেকে সব্জির চারা রোপণ করতেও হয়েছে। সোনার বাজারও যে বড়ই মন্দা। সব মিলিয়ে এই জনপদের মানুষের পকেট এখন গড়ের মাঠ।

আগে আলু থেকে সব্জি-সবেতেই চাষিরা ভাল মূল্য পেতেন। পুজোর সময় ভিন রাজ্যে থাকা সোনার কাজে যুক্ত কারিগরেরাও বাড়িতে মোটা অঙ্কের টাকা পাঠাতেন ।ফলে পুজোর এক থেকে দেড় মাস আগে থেকেই ঘাটালে সকাল থেকে রাত পযর্ন্ত মানুষের ভিড় লেগেই থাকত। দোকান মালিক থেকে কর্মীরা ক্রেতাদের আবদার মেটাতে এবং বিক্রি করতে হিমসিম খেতেন। দোকানের কর্মীরাও বাড়তি ডিউটি করে পুজোর সময় মোটা টাকা আয় করতেন। কিন্তু এখন সেই অবস্থা আর নেই। বিশেষ করে এ বার সোনার ব্যবসায় মন্দা থাকায় বহু কারিগর কাজ হারিয়ে বাড়িতেই রয়েছেন। খরিফ থেকে সব্জি চাষেও একই অবস্থা। আর তার জেরেই ভাটা পড়েছে পুজোর কেনাকেটায়!

ঘাটালের মোট জনসংখ্যার সত্তর ভাগ মানুষই কৃষি নির্ভর। আর ঘাটাল শহর-সহ মহকুমার অনান্য ব্লকের সদর শহরগুলিতে চাষি পরিবারের মানুষই দোকানগুলিতে ভিড় জমাতেন। এ বার বাড়ির ছোটদের এবং মেয়েদের আবদার মেটাতে টুকিটাকি কেনাকেটা করেই হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। সরকারি কর্মীদের একাংশ ঘাটালে পুজোর বাজার করলেও বেশিরভাগই কলকাতামুখী। ব্যবসায়ী মহলের হালও তচৈবচ। সোনা ও চাষের জেরে শুধু পুজোর বাজারে ভাটা নয়, প্রভাব পড়েছে অন্য ব্যবসাতেও।

ঘাটালের বেশিরভাগ দোকান মালিক পুজোর সময় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে মাল তুলে রাখেন। কেউ কেউ মাল নিয়ে এসে তা বিক্রি করে একটা লভাংশ্য পান। কিন্তু এ বার দোকানে খদ্দেরদের দেখা নেই। ফলে উদ্বেগে দোকান মালিকরাও। বিশেষ করে ছোট ছোট কাপড়, জুতো থেকে প্রসাধনী দোকান মালিকদের অবস্থা খুবই করুণ।

ঘাটালের কুঠিবাজারে বড় এক কাপড় দোকান মালিক তুষার দত্ত বলেন, “অনান্য বছর এক মাস আগে থেকে দোকানে খদ্দেরদের লম্বা লাইন পড়ে। ভিড় দেখে বহু খদ্দের অন্য দোকানে চলেও যেতেন। এ বার পুরো ফাঁকা। যা বিক্রি হচ্ছে-এটা সারা বছরই দোকান খোলা থাকলেই হয়। পুজোর বাজার বলতে যা বোঝায়-ঘাটালে এখনও তার ছোঁয়া লাগেনি।’’

ঘাটালের কুশপাতায় এক শপিং মলের কর্তা সৈকত সিংহের কথায়, “পুজোর জন্য কর্মীর সংখ্যা (অস্থায়ী) বেড়েছে। নানা ধরনের অফারও দেওয়া হচ্ছে। সব ধরনের জিনিস দোকানে মজুত। কিন্তু তুলনামুলক ভাবে খদ্দের অনেক কম।” একই বক্তব্য দাসপুরের এক কাপড় ব্যবসায়ী শেখ রফিক আলিরও।

চন্দ্রকোনার এক প্রসাধনী দোকান মালিক অমিয় শাসমলের কথায়, “এ বার যা অবস্থা, দিনে দু’দশটি ক্রেতা ছাড়া আর কোনও ক্রেতার ভিড় নেই। কী যে হবে বুঝতে পারছি না। একের সোনার বাজার খারাপ। সঙ্গে চাষেও লাভ পাননি চাষিরা। ফলে আমাদের ব্যবসাও লাটে ওঠার জোগাড়! তবে এখনও সময় আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন