রেলশহরে ক্ষোভ দায়সারা কাজ, মশার উপদ্রবে টেকা দায়

মশা নিধনে তেল, ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল খড়্গপুর শহরে। জানানো হয়েছিল আগাছা সাফাইয়ের কথাও। অভিযোগ, শহরের অধিকাংশ ওয়ার্ডেই এই কর্মসূচি পালন করা হয়নি। অনেক জায়গায় মাত্র এক দিন তেল স্প্রে করেই কাউন্সিলররা দায় সেরেছেন বলে অভিযোগ। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ শহরবাসী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৪
Share:

খড়্গপুর মালঞ্চ রোডে স্কুলের সামনেই আবর্জনা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

মশা নিধনে তেল, ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল খড়্গপুর শহরে। জানানো হয়েছিল আগাছা সাফাইয়ের কথাও। অভিযোগ, শহরের অধিকাংশ ওয়ার্ডেই এই কর্মসূচি পালন করা হয়নি। অনেক জায়গায় মাত্র এক দিন তেল স্প্রে করেই কাউন্সিলররা দায় সেরেছেন বলে অভিযোগ। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ শহরবাসী।

Advertisement

রেলশহরের নিকাশির দশা এমনিতেই খারাপ। কোথাও ভেঙে গিয়েছে নিকাশি নালা, আবার কোথাও নিয়মিত নালা সাফাই না হওয়ায় বৃষ্টি হলেই নোংরা জলে ভাসে রাস্তা। গত মাস থেকেই শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়াতে শুরু করে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মশার দাপট কমেনি। ফলে ফের মশাবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কায় শহরের বাসিন্দারা।

গত ৩ অগস্ট ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়, শহরে মশানাশক তেল ছড়ানো হবে। যদিও ঘোষণাই সার, কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। এ জন্য পরিকাঠামোর অভাবকেই দায়ী করেন একাংশ কাউন্সিলর। কাউন্সিলরদের দাবি ছিল, পুরসভা থেকে যে পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার, তেল দেওয়া হয় তা একটি ওয়ার্ডের পক্ষে যথেষ্ট নয়। পরিস্থিতি সামলাতে গত মাসের শেষে জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসে পুরসভা। মশা নিধনে শহর জুড়ে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়।

Advertisement

কেন্দ্রীয় ভাবে ২০ জন অস্থায়ী শ্রমিকও নিয়োগ করে পুরসভা। ঠিক হয়, প্রতিদিন দু’জন করে শ্রমিক ১০টি করে ওয়ার্ডে ঘুরে মশানাশক তেল স্প্রে করবে। ৩৫টি ওয়ার্ডের জন্য ৬০টি ‘স্প্রে মেশিন’ কেনা হয়। এতকিছু করেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ।

শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গৃহবধূ পাপিয়া সেন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সন্দীপ দাসের অভিযোগ, “দিন পনেরো আগে মশা মারার তেল স্প্রে করতে দেখেছিলাম। নাম কা ওয়াস্তে একদিন দেওয়া তেলে তো মশা কমেনি।” ইন্দার বাসিন্দা সোমনাথ আচার্যের অভিযোগ, “একদিনও আমার বাড়ির সামনে তেল দিতে দেখিনি। শুনেছি, কাউন্সিলরের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় একদিন তেল দেওয়া হয়েছিল।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘অবরুদ্ধ ভাঙা নিকাশি নালায় জল জমে থাকে। মশার উপদ্রবে টেকা দায়। পুরসভা কী ভাবছে জানি না।”

একইভাবে, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা শুভ্রা গুপ্তর অভিযোগ, “বাড়ির এলাকায় একদিনও মশা নিধনে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। এমনকী ২ নম্বর ওয়ার্ডে আমার স্কুলের সামনে জল জমে রয়েছে। আগাছায় চারিদিক ভরে গিয়েছে। কাকে কী বলব!”

সর্বত্র মশানাশক তেল দেওয়া হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পুর কর্মীদের। যদিও কাউন্সিলরদের দাবি, নিয়মিত তেল দেওয়া হচ্ছে। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রীতা শর্মা বলেন, “ওয়ার্ডে যন্ত্রের অভাবে ধোঁয়া দেওয়া যাচ্ছে না। তবে নিয়মিত তেল ছড়ানো হচ্ছে।” পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারেরও বক্তব্য, “অভিযোগ ঠিক নয়। মশা নিধনে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ জন করে বাড়তি লোক দেওয়া হয়েছে। ‘স্প্রে মেশিন’ দিয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের। এরপরেও কোনও কাউন্সিলর নিষ্ক্রিয় রয়েছেন কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন