খুচরোর পাহাড়, সঙ্কটে সংবাদপত্র বিক্রেতারা

হলদিয়ার মাখনবাবুর বাজারে খবরের কাগজ বিক্রি করা নয়নবাবুর বাড়ি রায়রায়াচক গ্রামে। শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী এই মানুষটি চলাফেরা করে ট্রাইসাইকেলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২২
Share:

জেরবার: ব্যাঙ্ক জমা নিচ্ছে না। খুচরো নিয়ে বিপদে পড়ছেন প্রতিবন্ধী সংবাদপত্র বিক্রেতা। নিজস্ব চিত্র

বছর দশেক ধরে বট গাছের তলায় বসে খবরের কাগজ বিক্রি করেন নয়ন শীট। কাগজ কিনে স্বভাবত খুচরোতেই দাম মেটান বিক্রেতারা। কিন্তু কিছু দিন ধরে এই খুচরোই মাথাব্যথা হয়েছে নয়নবাবুর। তাঁর দাবি, কোনও ভাবেই খুচরো নিচ্ছে না ব্যাঙ্ক বা এজেন্টরা।

Advertisement

হলদিয়ার মাখনবাবুর বাজারে খবরের কাগজ বিক্রি করা নয়নবাবুর বাড়ি রায়রায়াচক গ্রামে। শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী এই মানুষটি চলাফেরা করে ট্রাইসাইকেলে। ফলে বিপদে পড়ে গিয়েছেন তিনি। নয়নবাবুর কথায়, “হিসেব করে দেখেছি, ১৭ হাজার টাকার মতো খুচরো রয়েছে। কিন্তু এই টাকা নিয়ে কী করব বুঝতে পারছি না। ব্যবসার হাল খুব খারাপ। এ ভাবে চললে হয়তো ব্যবসা বন্ধই করে দিতে হবে।” খুচরোর পাশাপাশি বিপত্তি বাড়িয়েছে ছোট এক টাকার কয়েন।

প্রতিবন্ধী খবরের কাগজ বিক্রেতার বক্তব্য, একাধিকবার বিভিন্ন ব্যাঙ্কে গিয়েছেন তিনি, কিন্তু খুচরো নিতে চাইছে না কেউই। গোনার লোক নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছে ব্যাঙ্ক। এ নিয়ে নানা জায়গায় দরবার করেও লাভ হয়নি, আক্ষেপ তাঁর। ব্যাঙ্কের অবশ্য পাল্টা দাবি, এত খুচরো গোনার লোক নেই। এই টাকা নিতে গেলে অন্য কাজ নষ্ট হবে। পুরসভা এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিক শচীন্দ্রনাথ ঘোড়ই বলেন, “খুচরো না নেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা কম খুচরো হলে নিচ্ছি। কিন্তু হাজার হাজার টাকার খুচরো গোনার
লোক নেই।”

Advertisement

তবে নয়ন শীট একা নন, খুচরো নিয়ে বিপদে পড়েছে এলাকার বহু সংবাদপত্র বিক্রেতাই। হলদিয়ার সংবাদপত্রের এক এজেন্ট তপন প্রধান বলেন, “আমার কাছে ৬৭ হাজার টাকার খুচরো রয়েছে। কিছুতেই কেউ নিচ্ছে না। এত টাকা নিয়ে কী করব?” তিনি আরও জানান, হলদিয়ার এক সংবাদপত্রের এজেন্টের কাছে ৭ লক্ষ টাকার খুচরো রয়েছে। একই ভাবে চৈতন্যপুরের সংবাদপত্র বিক্রেতা চন্দনা মাইতির কাছে রয়েছে কয়েক হাজার টাকার খুচরো। তাঁর আক্ষেপ, “এ ভাবে চললে পেশা বদলাতে হবে।” দুর্গাচকে গাছের নীচে বসে সংবাদপত্র বিক্রি করেন বিক্রমজিৎ দাসের বক্তব্য, “ব্যাঙ্ক আমাদের এক দিন সময় দিক। সব খুচরো জমা দিয়ে আসব। না হলে ব্যবসা চালানো অসম্ভব।” একই অবস্থা প্রশান্ত দাস বক্সী, তাপস মাইতিদেরও। আর এক বিক্রেতা সুকান্ত বক্সী জানান, ১ টাকা, ২ টাকার কয়েন এ ভাবে মূল্যহীন হয়ে যাবে, ভাবা যায়নি। এখন বাটা দিয়ে খুচরো ছেড়ে দিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। কেমন এই বাটা? সুকান্তবাবু জানান, ১০০ টাকা খুচরোয় দিলে নোটে মিলছে ৯০ টাকা। সরকার সহযোগিতা না করলে ব্যবসা শেষ হয়ে যাবে বলে হতাশাও প্রকাশ করেন তিনি। যদিও এই সমস্যায় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন হলদিয়ার মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু নস্কর। তাঁর কথায়, সংবাদপত্র বিক্রেতারা তাঁদের সমস্যা লিখিত ভাবে জানালে আমি জেলার লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজারকে জানাব। তিনি সমস্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান সূত্র বের করতে পারবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন