WB Panchayat Election 2023

গণতন্ত্রের উৎসবেই ঝরেছিল প্রাণ

পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পরই আশঙ্কায় ছিল নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের খোদামবাড়ি-২ পঞ্চায়েতের গোপালপুরের মান্না ও ঘোষ পরিবার। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ ০৯:২৬
Share:

কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারি। — ফাইল চিত্র।

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আশাবাদী গত পঞ্চায়েত ভোট-হিংসায় দুই নিহতের পরিবার। তারা বলছে, গত পঞ্চায়েত ভোটে যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকত, তা হলে তাদের পরিজনের মৃত্যু হত না।

Advertisement

গত পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পরই আশঙ্কায় ছিল নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের খোদামবাড়ি-২ পঞ্চায়েতের গোপালপুরের মান্না ও ঘোষ পরিবার। ২০১৮ সালের ১৪ মে গ্রামের বুথেই ভোট দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন এই দুই পরিবারের সদস্য বিশ্বজিৎ মান্না (৩০), যজ্ঞেশ্বর ঘোষ (৬৫)। তারপর লোকসভা, বিধানসভা একাধিক নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রের মাপকাঠি নির্বাচন ওই পরিবারগুলির কাছে আতঙ্কের। তবে এবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় ভোট হচ্ছে জেনে খানিকটা স্বস্তিতে তারা।

বিশ্বজিৎ মান্নার স্ত্রী জয়ন্তী মান্না বলেন, ‘‘ওই দিনটা কখনও ভোলার নয়। কোনও স্ত্রী ভুলতে পারে? পরিবারের সবাই মিলে গোপালপুর উত্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলাম মহা উৎসাহে। আমি আর আমার শাশুড়ি ভোট দিয়ে চলে এসেছিলাম। পুরুষদের লাইন দীর্ঘ ছিল ফলে স্বামীর ফিরতে দেরি হচ্ছিল। ঘরে ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝামেলার খবর পাই। গুলি- বোমার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। পরে খবর পেলাম স্বামীর গুলি লেগেছে। দৌড়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু গ্রামের মোড়ে কিছু মানুষ আমাকে আটকে দিল। পরে ওঁর নিঃষ্প্রাণ দেহ দেখেছিলাম ক্ষুদিরাম মোড়ে পড়ে থাকতে।"

Advertisement

নিহত বিশ্বজিৎ ছত্তিশগড়ে কাজ করতেন। শুধু ভোট দেওয়ার জন্য অতদূর থেকে এসেছিলেন। সেই মানুষটা ভোটকেন্দ্রেই গুলিতে নিহত হন। ওই আতঙ্কের ভাগ করে নেওয়ার ফাঁকে জয়ন্তী বলছিলেন, ‘‘আশা করছি এবার ভোট শান্তিতে হবে। আর কারও প্রাণ যাবে না। এবারও ভোট দেব। তবে একটাই আক্ষেপ পাঁচ বছর আগে যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকত, তবে আমার স্বামীর প্রাণটা যেত না।’’ ওই দিনই মারা গিয়েছিলেন যজ্ঞেশ্বর। তাঁর ছেলে সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘শুধু আমি নই, কেন্দ্রীয় বাহিনী আসার খবরে স্বস্তিতে গোটা নন্দীগ্রাম। ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আমার বাবা এবং অন্য ভোটারদের যখন তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীবাহিনী গুলি চালায়, তখন রাজ্য পুলিশ ছিল নীরব। ১০০ মিটার দূরে আমি এক নির্দল প্রার্থীর সমর্থনে একটি ক্যাম্পে বসেছিলাম। গুলির শব্দে ছুটে আসি। দেখি বাবা মাটিতে পড়ে। পেটে গুলি লেগেছে।’’ সঞ্জয়ের ক্ষোভ, ওই দুষ্কৃতীরা এলাকা ঘিরে থাকায় বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাতে পারেননি। চোখের সামনে বাবাকে যন্ত্রণায় ছটপট করতে করতে মারা যেতে দেখেছেন। সঞ্জয় বলছেন, ‘‘আশা করি এবার আর কারও জীবনহানি হবে না। আমরা শান্তিতে ভোট দিতে পারব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন