জেলা খাদ্য দফতরের আধিকারিকের ঘরে বিক্ষোভকারী চাষিরা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
ধান বিক্রি করেও টাকা না মেলায় ক্ষোভ ছিলই। এ বার খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের অফিসের সামনে বুধবার বিক্ষোভ দেখালেন অত্যাবশাকীয় পণ্য নিগমকে (ইসিএসসি) সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করা চাষিরা। জেলা খাদ্য নিয়ামকের দফতরে ঢুকে চেক বাউন্স হওয়ার কারণ জানতে চান চাষিরা। এ ব্যাপারে অবশ্য জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায় কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি চাষিদের আশ্বস্ত করে কেবল জানিয়েছেন, “আজ অর্থাত্ বৃহস্পতিবার ইসিএসসি-র আধিকারিকেরা মেদিনীপুরে আসবেন। চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার একটা পথ বের করবেন।” আশ্বাসর পেয়ে চাষিরা বিক্ষোভ তুলে নেন। তবে চাষিরা হুঁশিয়ারি দেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে ভবিষ্যতে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।
এ দিন প্রায় একশো জনের মতো বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন। জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইসিএসসি-র আধিকারিকেরা ইতিমধ্যেই তদন্তের কাজ শেষ করে ফেলেছেন। বৃহস্পতিবার ফের এসে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে টাকা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু সরকারি চেক ‘বাউন্স’ হওয়ায় চাষিরা অবশ্য টাকা হাতে না পর্যন্ত খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছেন না।
সম্প্রতি জেলার ২০টি জায়গায় শিবির করে সহায়ক মূল্যে ধান কিনেছিল ইসিএসসি। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে মার্চ মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত ধান কেনা হয়। ধান কেনার সঙ্গে সঙ্গে চাষিদের নামে চেকে টাকাও দিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে, ৪ মার্চ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত যে ধান কেনা হয়েছে তা প্রকৃত চাষির কাছ থেকে কেনা হয়নি। মাঝ পথে মুনাফা পেয়েছে ফোড়েরা। তারপরই তদন্তে নামে ইসিএসসি। বন্ধ করে দেওয়া হয় টাকা দেওয়া। ফলে চেক ব্যাঙ্কে জমা দিয়েও চাষিরা টাকা পাননি। উল্টে চেক ‘বাউন্স’ হওয়ায় চাষিক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন দ্বিজেন বেতাল, এরশাদ আলি, প্রবীর জানা, সোমা মাহাতোর মতো চাষিরা।
চলতি বছরে আলুর দাম কম। ফলে আলু চাষ করে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন চাষিরা। ধানেও লাভ হয়নি। সরকার যেখানে কুইন্ট্যাল প্রতি ১৩৬০ টাকা ধানের সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করেছে সেখানে চাষিরা প্রতি কুইন্ট্যালে ১ হাজার থেকে বড় জোর ১ হাজার একশো টাকা পেয়েছে। জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার কারণেই চাষিরা ধানের দাম পাননি বলে অভিযোগ। চলতি বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লক্ষ ৬২ হাজার টন। সহায়ক মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনে (কুইন্ট্যাল প্রতি ১৩৪০ টাকা) রাইস মিলে চাল বানিয়ে তা নেওয়ার কথা। জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের পাশাপাশি সরকারি সংস্থা ‘ইসিএসসি’, ‘বেনফেড’, ‘কনফেড’-সহ বিভিন্ন সংস্থার এই কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু চলতি আর্থিক বছর শেষ হয়ে গেল, অথচ অর্ধেক চালও সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার।
প্রশাসনিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১ লক্ষ ৬১ হাজার মেট্রিক টনের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪৯ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন চাল কেনা গিয়েছে। চলতি আর্থিক বছর শেষ হয়ে গেল। অথচ, ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকও পূরণ করা যায়নি। ফলে চাষিরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত। তার উপর ধান বিক্রি করেও টাকা না মেলায় ক্ষতির বহর বেড়েছে। ফলে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। ক্ষোভ প্রশমিত করতে এবার রাজ্য সরকারও নড়েচড়ে বসেছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তাই বিক্ষোভের খবর পাওয়ার পরেই বিক্ষোভের পরদিনই ইসিএসসি-র প্রতিনিধিরা মেদিনীপুরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষিরা এ বার পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন। যদি সঠিক চাষির কাছ থেকেই ধান কেনা না হয় তাহলে ধান কেনার সময় কেসিসি কার্ড, পঞ্চায়েতের শংসাপত্র সহ নানা নথি দেখা হল কেন? ধান কেনার দায়িত্বে থাকা ‘পারচেজ অফিসার’ কেনই বা তাহলে চেক দিলেন? খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরাই বা কী করছিলেন? যদি এমন ঘটনা ঘটেই থাকে তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে চাষিদের টাকা কেন আটকে রাখা হচ্ছে। এ সব প্রশ্নের উত্তর তো মেলেইনি, মেলেনি টাকাও। ফলে চাষিদের ক্ষোভ সামাল দিতেই জেলায় আসছেন ইএসসি কর্তৃপক্ষ। চাষিরা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, শুধু ধানের দাম নয়, চেক বাউন্স হওয়ার জন্য তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে যে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে তাও দিতে হবে। এখন ইসিএসসি কর্তৃপক্ষ চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করে কী সমাধান সূত্র বের করে এখন সেটাই দেখার।