সমুদ্র-নয়: জেলা জুড়ে ধান জমিতে চলে মাছ চাষ। ময়নায়। নিজস্ব চিত্র
উপকূলের নোনা জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষে লাভ বেশি। তাই গত কয়েক বছরে বিঘার পর বিঘা ধানজমি ভোল বদলে হয়ে গিয়েছে ভেড়ি। চাষের মাঠে জল ঢুকিয়ে দিব্যি চাষ হচ্ছে মাছ। কিন্তু লাভের অজুহাতে চাষজমির এই রূপান্তর নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষি দফতর। জমি বাঁচাতেই তাই এ বার পদক্ষেপ করতে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষি দতফতর। লবণাক্ত জমিতে ‘ল্যান্ড শেপিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে ধানচাষের সঙ্গেই মাছ ও আনাজ চাষ করা যায়। এ ভাবেই সাফল্য মিলেছিল আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের জমিতে।
চলতি বছরেই খেজুরি-১ ব্লকের লাক্ষী পঞ্চায়েতের বেলিয়াচটা গ্রামের ১৪ জন কৃষকের পনেরো একর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই চাষের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, ‘‘লবণাক্ত জমিকে যদি বিশেষ পদ্ধতিতে সারাবছর চাষের উপযোগী করে একই সঙ্গে ধান, মাছ ও বিভিন্ন মরসুমি আনাজের চাষ করা যায় তবে আর্থিক দিক থেকে লাভ তো হবেই। জমির চরিত্র বদলের প্রবণতাও রোখা যাবে।’’ তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে উপকূলবর্তী খেজুরি এলাকায় এই পদ্ধতি কার্যকর করা হবে। পরে জেলার উপকূলবর্তী অন্য এলাকায় তা চালু করা হবে। খেজুরি-১ ব্লক কৃষি আধিকারিক রবিশঙ্কর দাস জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিচাই যোজনায় লাক্ষী এলাকার বেলিয়াচটা গ্রামে চাষের প্রস্তুতি চলছে।’’
জেলা কৃষি দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উপকূলবর্তী খেজুরি, নন্দীগ্রাম, কাঁথি, রামনগর এলাকার লবণাক্ত জমিতে বর্ষাকালে আমন ধানের চাষ করা যায়। কিন্তু শীত ও গ্রীষ্মকালে মাটির নীচে জলস্তর অনেকটা নেমে যায়। ফলে সেচের সমস্যায় বেশির ভাগ জমিতেই চাষ করা যায় না। তাই এক ফসলি জমিকে গত কয়েক বছরে চিংড়ি চাষের ভেড়িতে বদলে দেওয়া হয়েছে। যথেচ্ছেভাবে চাষ জমির রূপান্তরে কমছে ধান, আনাজ চাষের পরিমাণ। কৃষি দফতরের দাবি, লবণাক্ত জমিকে পরিকল্পনামাফিক কিছুটা পরিবর্তন করে সেখানে সারাবছর ধরে ধান, আনাজ ও মাছ চাষ করা যায়।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় কৃষি গবেষণা পর্ষদের অধীনে এই ‘ল্যান্ড শেপিং’ পদ্ধতিতে নিয়ে গবেষণায় সাফল্য মিলেছে। নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট আয়তনের লবণাক্ত জমির চারদিকে ১ মিটার উঁচু আল তৈরি করতে হয়। তার নীচের অংশটি হবে তিন মিটার চওড়া ও মাথার অংশ দেড় মিটার চওড়া। আলের ভিতরে খাল খনন করা হবে, যার উপরের অংশ তিন মিটার চওড়া ও নীচের অংশ দেড় মিটার চওড়া। জমির প্রায় ২০ শতাংশ এলাকায় একটি পুকুর থাকবে। পুকুরের সঙ্গে আবার যুক্ত থাকবে আলের খালটি। জমির বাকি প্রায় ৭০ শতাংশ মাটি ভরাট করে এক ফুট উঁচু করে দেওয়া হবে। সেখানেই জলদি জাতের ধান চাষ হবে বর্ষায়। আর আলের অংশে ঢেঁড়শ, ঝিঙে, চিচিঙ্গে-সহ বিভিন্ন বর্ষাকালীন আনাজ চাষ করা হবে। শীতে ওই জমিতে ও চারপাশের আলে বিভিন্ন আনাজ চাষ করা যাবে। জলাশয়ে মাছের চাষ হবে। আবার ওই জলেই সেচের চাহিদা খানিকটা মিটিয়ে নেওয়া যাবে, আশা কৃষি কর্তাদের।