বাবা বিয়ে দিচ্ছে, বাঁচতে স্কুলে ছাত্রী

কী হয়েছে জানতে চাইতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল পূজা। জানাল, বাড়ি থেকে তার বিয়ের ঠিক করেছে। বিয়ের আগেই বছর তেইশের পাত্রের সঙ্গে মেলামেশা করতে পূজাকে বাধ্য করছে তার বাবা রাহুল বিশ্বাস। পূজার কথায়, ‘‘বাবা কিছু শুনছে না। কিন্তু আমি পড়তে চাই। ভবিষ্যতে নার্স হতে চাই।’’ 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০৮:০৮
Share:

সাহসিনী: স্কুলে পূজা (ডান দিকে), পাশে মনীষা। নিজস্ব চিত্র

সকাল এগারোটা। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার ঘরে হাঁপাতে হাঁপাতে ঢুকে পড়ল নবম শ্রেণির পূজা বিশ্বাস। সঙ্গে তার বোন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মনীষা।

Advertisement

মঙ্গলবার স্কুলের দুই ছাত্রীর এমন আচরণে গোড়ায় হকচকিয়ে গিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের ননীবালা বালিকা বিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ সুচেতা সেনগুপ্ত বসু। কী হয়েছে জানতে চাইতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল পূজা। জানাল, বাড়ি থেকে তার বিয়ের ঠিক করেছে। বিয়ের আগেই বছর তেইশের পাত্রের সঙ্গে মেলামেশা করতে পূজাকে বাধ্য করছে তার বাবা রাহুল বিশ্বাস। পূজার কথায়, ‘‘বাবা কিছু শুনছে না। কিন্তু আমি পড়তে চাই। ভবিষ্যতে নার্স হতে চাই।’’

জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাগমারি গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে পূজার বিয়ে ঠিক করেছিলেন অভিভাবকেরা। ছেলেটি কেরলের এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে। সম্প্রতি ওই যুবক পূজাকে ল্যাপটপ উপহার দিয়েছে। এ দিকে, পূজা বিয়েতে বেঁকে বসায় তার টিউশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্কুলেও আসতে দেওয়া হচ্ছিল না। এমনকী পূজাকে অভিভাবকেরা মারধর করছিলেন বলেও অভিযোগ। শেষে বিয়েতে রাজি মিথ্যে বলেই এ দিন স্কুলে আসে দুই বোন। লিখিতভাবে পূজা স্কুলের চিটার ইনচার্জকে জানায়, সে পড়তে চায়। বাড়িতে ফিরতে চায় না। মনীষাও জানিয়ে দেয় সে দিদির সঙ্গে থাকতে চায়। কারণ, বাড়ি ফিরলে দিদির মতো তাকেও হয়তো জোর করে বিয়ে দেওয়া হবে।

Advertisement

এরপর টিচার-ইনচার্জ সুচেতাদেবী পুলিশ-প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে বিষয়টি জানান। স্কুলে চলে আসেন ঝাড়গ্রামের বিডিও অভিগ্না চক্রবর্তী, এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) দীপক সরকার, ঝাড়গ্রাম মহিলা থানার ওসি অর্পিতা সাহা, ঝাড়গ্রাম পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন শিউলি সিংহ, স্থানীয় পুরপিতা কল্লোল তপাদার। স্কুলে ডেকে পাঠানো হয় পূজার বাবা রাহুল বিশ্বাস ও মা মঞ্জুদেবীকে। রাহুল শহরের পাঁচমাথা মোড়ে একটি দোকানে দর্জির কাজ করেন। মঞ্জুদেবী পরিচারিকার কাজ করেন। ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন তাঁরা। তাঁরা অবশ্য প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “মেয়েরা ঠিকমতো পড়াশোনা করে না বলে বিয়ের ভয় দেখিয়েছি।” পূজা ও মনীষা পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের সামনে জানিয়ে দেয়, বাবা-মা মিথ্যে কথা বলছেন। তখন অভিভাবকরা বলেন, ‘‘কথা দিচ্ছি বিয়ে দেব না।’’ কিন্তু বাবা-মায়ের কথায় ভরসা রাখতে চায়নি দুই বোন।

এরপর দুই সাহসিনীকে গাড়িতে চাপিয়ে বাছুরডোবায় তাদের বাড়িতে তদন্তে যান বিডিও অভিগ্নাদেবী। পাড়া-পড়শিদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে দুই বোনকে সরকারি উদ্যোগে নিরাপদ হেফাজতে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে এই স্কুলের আর এক ছাত্রীর বিয়ের ঠিক করেছিলেন অভিভাবকরা। ওই ছাত্রীটিও স্কুলের টিচার ইন-চার্জের দ্বারস্থ হয়েছিল। এ দিনের ঘটনার পরে সুচেতাদেবী বলেন, “দুই বোনই কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। ওদের এই প্রতিবাদের ফলে আরও অনেক সাহসিনী জন্ম নেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন