নার্সিংহোম থেকে বের করে আনা হচ্ছে রোগীদের। ফাইল চিত্র।
আগুন লাগল মেদিনীপুরের একটি নার্সিংহোমে। শনিবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যালের ঠিক উল্টোদিকে ওই নার্সিংহোম থেকে কালো ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে। ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেন রোগী এবং রোগীর পরিজনেরা। প্রসূতিরাও শিশু কোলে দৌড়তে শুরু করেন। তবে বড়সড় কোনও বিপদ হয়নি।
নানা অনিয়মে কয়েক মাস আগেই বন্ধ হয়েছিল শহরের বটতলাচকের এই নার্সিংহোমটি। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। সেই মতো পরিকাঠামো ফের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। নার্সিংহোম পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য দফতরের দল। তারপর লাইলেন্স পেয়েই গত মাসেই ফের নার্সিংহোমটি চালু হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সেখানে আগুন লাগায় শোরগোল পড়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “মাস খানেক আগেই ওই নার্সিং হোম পরিদর্শন হয়েছে। ওখানে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। তাও ঘটনার সব দিক খতিয়ে দেখা হবে।’’
এ দিনের আগুন অবশ্য দমকলের ইঞ্জিন এসে আধ ঘণ্টার মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আনে। দমকলের ডিভিশনাল অফিসার দীপঙ্কর ঘটক বলেন, ‘‘বড় কিছু হয়নি। আগুনে নার্সিংহোমের তেমন কোনও ক্ষতিও হয়নি।’’ প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান, এসি-তে শর্টসার্কিট থেকেই আগুন লেগে যায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘ঘটনার কথা শুনেছি। পরিদর্শনে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হবে।’’ আর নার্সিংহোমের মালিক মৌমিতা ঘোষের দাবি, “অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকঠাকই রয়েছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা।’’
যে ভবনে এই নার্সিংহোমটি রয়েছে, সেটি মেদিনীপুর পুরসভার। পুরসভা ভবনের একটি অংশ ভাড়ায় ‘কে জি মেডিকেয়ার’ নামে ওই নার্সিংহোমকে দিয়েছে। আইসিইউ রয়েছে। দমকলের এক সূত্রে খবর, আইসিইউ-র পাশে একটি এসি-তেই এ দিন শর্ট-সার্কিট হয়। ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে। ধীরে ধীরে সেই ধোঁয়া ও আগুন ছড়াতে শুরু করে। ঘটনার সময় নার্সিংহোমে ২১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। আইসিইউতে ছিলেন ৩ জন। পরিস্থিতি দেখে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আইসিইউতে আর রোগী রাখার ঝুঁকি নেননি। ৩ জনের মধ্যে একজন বাড়ি ফিরে যান। বাকি ২ জনকে মেদিনীপুরের অন্য নার্সিংহোমে পাঠানো হয়। নার্সিংহোমের একটি ফ্রিজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফ্রিজ থেকেও শটসার্কিট হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান।
মেদিনীপুরে নার্সিংহোমে আগুন লাগার ঘটনা এই প্রথম নয়। বছর কয়েক আগে রবীন্দ্রনগরের এক বেসরকারি হাসপাতালেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই ক্ষেত্রেও শর্ট-সার্কিট থেকে বেসমেন্টে আগুন লেগেছিল। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে। মেদিনীপুর মেডিক্যালেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন মহলের বক্তব্য, পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ছাড়াই বেশ কিছু নার্সিং হোম চলছে। স্বাস্থ্য দফতরেরও কোনও হেলদোল নেই। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবুর আশ্বাস, “নার্সিং হোমের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নতুন করে খতিয়ে দেখা হবে।’’