তালাবন্ধ: বন্ধই পড়ে সবংয়ের মৎস্য বাজার। নিজস্ব চিত্র
স্টল বিলিই সার। সবংয়ের বিষ্ণুপুরের মৎস্য বাজারে মাছ বিক্রি হয় না। তার বদলে বাজার চত্বরে গজিয়ে উঠেছে বিষাক্ত পার্থেনিয়ামের ঝোপঝাড়!
সবংয়ে মাছ ব্যবসার রমরমা থাকায় বছর সাতেক আগে বিষ্ণুপুরে গড়ে তোলা হয় মৎস্য বাজার। বছর তিনেক আগে বাজারের স্টলও বিলি হয়। যদিও সেই স্টলে দোকান আর বসেনি। প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি বাজার ভবনের এখন জীর্ণ দশা। মরচে ধরছে বাজারের লোহার দরজায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে সম্প্রতি এই মৎস্য বাজার চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে মৎস্য দফতরের অধীনস্থ সমবায় সংস্থা ‘বেনফিস’। সম্প্রতি ওই মৎস্য বাজার পরিদর্শন করে গিয়েছেন দফতরের যুগ্ম সচিব তথা ‘বেনফিশ’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিধান রায়। তাঁর কাছে সমস্যার কথা জানিয়ে স্টলের টাকার অঙ্ক কমানোর আবেদন জানিয়েছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।
২০০৯ সালে বাম আমলে সবংয়ে ‘বেনফিশ’-এর মাধ্যমে এই বাজার গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় মৎস্য দফতর। বিষ্ণুপুরে সরকারি জমিতে ২০১০ সালে গড়ে তোলা হয় বাজার ভবন। ভবনে রয়েছে ২৮টি স্টল। তারপরে চার বছর পেরিয়ে গেলেও স্টল বিলির কাজ হয়নি। ২০১৪ সালে স্টল বিলিও হয়। প্রথম পর্যায়ে ১৫ জনকে স্টল বিলি করা হয়। কথা ছিল, তিনটি কিস্তিতে স্টল প্রতি ১ লক্ষ টাকা দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। সেই মতো প্রথম কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা দেন স্টল প্রাপকেরা। এরপরে স্টল চালুর চেষ্টাও করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। যদিও ওই মৎস্যবাজার থেকে মাত্র তিনশো মিটার দূরেই রয়েছে মাছের পাইকারি বাজার। ৯ জন মাছ চাষি ওই পাইকারি কারবারের সঙ্গে যুক্ত। স্টল চালানোর বরাতপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, পাইকারি বাজার বন্ধ না হলে স্টল খুলে ব্যবসা হবে। লোকসানের বহর বাড়ার আশঙ্কায় তাঁরা আর স্টল খোলার পথে হাঁটেননি।
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান গুরুপদ মান্না বলেন, “স্টলের দাম ১ লক্ষ টাকা হওয়ায় মাছের পাইকারি কারবারে যুক্ত চাষিরা ওই স্টল নিতে চায়নি। তাঁরা ৫০ হাজার টাকায় ওই স্টল চেয়েছেন। কিন্তু ‘বেনফিস’ সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এই অবস্থা।” গত ১৮ এপ্রিল মৎস্য বাজার পরিদর্শন করেন রাজ্যের মৎস্য দফতরের যুগ্ম সচিব বিধান রায়। স্থানীয় মাছ চাষিদের সমস্যা নিয়ে বিধানবাবুর সঙ্গে আলোচনা করেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি প্রভাত মাইতি।
প্রভাতবাবু বলেন, “ওই স্টলের দর কমানোর আবেদন জানিয়েছি। কারণ ওই পাইকারি মাছ ব্যবসায়ীরা ১ লক্ষ টাকা দিয়ে স্টল নিতে চাইছেন না। স্টলের দাম না কমানো হলে কোনওদিন ওই মৎস্য বাজার চালু করা সম্ভব হবে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যুগ্ম সচিব বিষয়টি বুঝেছেন। উনি স্টলের দর কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন।”
আশার আলো দেখছেন স্টল প্রাপকেরা। স্টল প্রাপক স্থানীয় বাসিন্দা গৌরহরি বেরা বলেন, “আমরা ১৫ জন উদ্যোগী হয়ে একসময় বাজার চালু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাছের বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা ১ লক্ষ টাকা দিয়ে নতুন বাজারে স্টল নিতে চায়নি। এ বার দাম কমানোর আশ্বাস মেলায় আশা করছি সমস্যার সমাধান হবে।” এ বিষয়ে রাজ্যের মৎস্য দফতরের যুগ্ম সচিব তথা ‘বেনফিশ’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিধানবাবু বলেন, “ওই স্টল চালু নিয়ে আমরা আশাবাদী। এলাকায় গিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। স্টলের দর ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমি স্টলের দাম ৭৫ হাজার টাকা করার কথা বলে এসেছি।’’ তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা এপ্রিল মাসের মধ্যেই স্টলের জন্য আবেদন জানাবেন বলেছেন। আশা করছি, এপ্রিল মাসের পরেই ওই বাজার খুলবে।”