উদ্বেগে প্রাণিপালকরা

গরমে শুকোচ্ছে গো-খাদ্য ফার্নও

প্রবল গরমে শুকিয়ে যাচ্ছে ঘাস। গরু, ছাগল, মুরগির মতো প্রাণীদের খাবার জোগাতে তাই ভরসা অ্যাজোলা ফার্ন। যদিও দাবদাহে রুগণ্‌ দশা ফার্নেরও। উদ্বেগে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের আধিকারিকরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৪৭
Share:

গাছের ছায়ায় চাষ হচ্ছে ফার্ন। — নিজস্ব চিত্র।

প্রবল গরমে শুকিয়ে যাচ্ছে ঘাস। গরু, ছাগল, মুরগির মতো প্রাণীদের খাবার জোগাতে তাই ভরসা অ্যাজোলা ফার্ন। যদিও দাবদাহে রুগণ্‌ দশা ফার্নেরও। উদ্বেগে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের আধিকারিকরা।

Advertisement

দফতরের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি ডিরেক্টর তপন সাধুখাঁ বলেন, “অত্যাধিক গরমে সব ধরনের গোখাদ্য আগেই শুকিয়ে গিয়েছে। আজোলা তবু কিছুটা হলেও তো ভরসা জুগিয়েছে। এ ছাড়া অন্য সময়েও সুষম খাদ্য হিসেবে অ্যাজোলার জুড়ি মেলা ভার।” তাই পশ্চিম মেদিনীপুরের বাইরে অন্য জেলাতেও ফার্নের চাষ বাড়াতে উদ্যোগী প্রশাসন।

অ্যাজোলা কী? এটি হল এক ধরনের ‘ফার্ন’। এশিয়া ও আফ্রিকার একাংশে অ্যাজোলার দেখা মেলে। অতি অল্প জলেও অ্যাজোলা দ্রুত বেড়ে ওঠে। প্রোটিন ও নানা ভিটামিনে পুষ্ট অ্যাজোলা অতি অল্প খরচে চাষ করা যায়। চাষের ১৫ দিন পর থেকেই গরু, শুকর, ছাগল থেকে মুরগি - সব ধরনের প্রাণীকেই অ্যাজোলা খাওয়ানো যায়। অ্যাজোলায় ২৫-৩০ শতাংশ প্রোটিন, ১০-১৫ শতাংশ খনিজ, ৭-১০ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। ফলে এই খাবার দিলে প্রাণীদের অন্য কোনও ভিটামিন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

Advertisement

মাস ছয়েক আগে সরকারি সহায়তায় অ্যাজোলা চাষ করেছিলেন খড়্গপুরের দিয়াশা গ্রামের ক্ষুদিরাম ঘোষ। তাঁর কথায়, “গরু অ্যাজোলা ভালই খাচ্ছিল। দুধও ভালই হচ্ছিল। এর ফলে গরুর দিন প্রতি খাবারের খরচ প্রায় ৫০ টাকা কমে গিয়েছিল। কিন্তু তীব্র গরমে ঘাস তো আগেই শুকিয়ে গিয়েছিল। এ বার আজোলাও মরছে।” আর এক চাষি বলরাম ঘোষের কথায়, “ঘাস বা অন্য গোখাদ্যের থেকে অ্যাজোলার দাম অনেকটা বেশি। তীব্র গরমে অনেক আগেই অন্য সবুজ উদ্ভিজ খাদ্য শুকিয়ে গিয়েছে। তারপরেও এ গুলি বেঁচে ছিল। কিন্তু টানা অনাবৃষ্টির দরুন আর অ্যাজোলাও সে ভাবে বাড়ছে না।”

বসতি বাড়ায় এমনিতেই গোচারণ ভূমি কমেছে। ফলে এখন গোখাদ্য হিসেবে একমাত্র ভরসা বিচুলি। যদিও বিচুলিরর খাদ্যগুণ অ্যাজোলার মতো উন্নত নয়। তাই বছরভর প্রাণিপালকেরা যাতে অ্যাজোলা চাষ করেন সে জন্য উৎসাহ দিচ্ছে প্রশাসন। কেউ অ্যাজোলা চাষ করলে নিখরচায় বীজ, সার ও প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করা হচ্ছে।

কী ভাবে অ্যাজোলা চাষ করতে হবে? প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় মাটির উপর ত্রিপল দিয়ে আগে ‘পিট’ তৈরি করতে হবে। চারিদিকে উঁচু করে ইঁট দিয়ে ত্রিপল আটকে রাখলেই হল। তারপর ত্রিপলের উপর মাটি, বীজ, জল ও সার ছড়িয়ে দিতে হবে। ২.২৫ মিটার x ১.৫ মিটার x ০.২ মিটার জায়গায় অ্যাজোলা চাষ করতে খরচ মাত্র দেড় হাজার টাকা। যা থেকে দিনে প্রায় দেড় কিলোগ্রাম গোখাদ্য মিলবে। কিছুদিন ছাড়া জল ও মাটি বদলে ফেলতে হবে। দিতে হবে সারও। ১৫ দিন পরেই অ্যাজোলা তুলে পরিষ্কার জলে ধুয়ে নুন দিয়ে গরু, ছাগল, মুরগি— সব ধরনের প্রাণীকেই খাওয়ানো যাবে।

দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টরের কথায়, “এই খাদ্য খেলে প্রাণীর স্বাস্থ্য আরও ভাল হবে। দুধ ও ডিম উৎপাদনও বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন