অবরুদ্ধ: মহকুমা তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের সামনে ভিড়। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই দলে দলে মানুষ নেমেছেন ঝাড়গ্রাম শহরে। হাজারে হাজারে লোকশিল্পী। গন্তব্য জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। সকলেই শুনেছেন শুক্রবার শেষ দিন। রাজ্যের লোকপ্রসার প্রকল্পে এরপরে আর নাম তোলা যাবে না।
তাই যে যেমন করে পেরেছেন, ছুটে এসেছে জেলা সদরে। সেই দলে এমন অনেকেই ছিলেন, যাঁরা আদতেই শিল্পী নন। তাতে কী? একবার শেষ চেষ্টা করে দেখা। প্রতিমাসে এক হাজার টাকা ‘বহাল ভাতা’, আর অনুষ্ঠান পেলে আরও একহাজার করে। পরিস্থিতি সামলাতে হিমসিম খেতে হয়এছে পুলিশ-প্রশাসনকে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন বলেন, “প্রকল্পে নাম তোলা ও অডিশনের শেষদিন শুক্রবার, এমন একটা গুজব রটে যায়। কী ভাবে এমন গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হল তা পুলিশ-প্রশাসনিকস্তরে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
সকাল ৮টা থেকেই ভিড় আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে শুরু করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মাইক্রোফোন লাগিয়ে জেলা তথ্য আধিকারিক বরুণ মণ্ডল জানিয়ে দেন, নতুন করে কোনও আবেদনপত্র জমা নেওয়া হচ্ছে না।
কিন্তু কেউই সে কথা শুনতে রাজি হয়নি। শেষে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪হাজার আবেদনকারী নথিপত্র জমা নিতে বাধ্য হন দফতর কর্মীরা। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘গুজব এমন ছড়িয়েছে যে বহু মানুষ খড়্গপুর থেকে এসেও নথি জমা দিয়ে গিয়েছেন। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে সব জমা পড়ে গিয়েছে।’’
এ দিন ভোর হতে না হতেই ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাড়ি ও ছোট লরি ভাড়া করে দলে দলে হাজির হন লোকজন। বাসে, ট্রেনেও আসেন অনেকে। ব্যস্ত সময়ে ‘শিল্পী’র ভিড়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু সরণি। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। প্রমাদ গোনেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের কর্মীরাও।
দফতর সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম জেলায় রাজ্য সরকারের লোকপ্রসার প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন ৪,৬৩০ জন লোকশিল্পী। আরও ৩৭,৬০০ জন আবেদন করেছেন। তাঁদের মধ্যে থেকে ২২ হাজার শিল্পীকে অডিশনে ডাকা হয়েছিল। অডিশনের জন্য গত দেড় মাসে হাজির হন ১৬ হাজার শিল্পী।
কিন্তু অনেকেই যাঁরা ডাক পেয়েও সময় মতো অডিশনে হাজির হতে পারেননি। অনেকেরই আবার নথিপত্রে গরমিল ছিল। তেমন আড়াইশো জন লোকশিল্পীকে শুক্রবার ফের ডাকা হয়েছিল। সে খবরই গুজব হয়ে যায়। সকলেই নাকি শুনেছেন, শুক্রবারের পর ওই প্রকল্পে আর আবেদন করা যাবে না।
দু’হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া করে গোপীবল্লভপুরের ছাতিনাশোল থেকে নথিপত্র জমা দিতে এসেছিলেন কীর্তন দলের সদস্য চিত্তরঞ্জন দেহুরি। তিনি বলেন, “আজই শেষদিন শুনে দলবল নিয়ে অডিশন দিতে এসেছিলাম। কিন্তু সব জলে গেল।” ওডিশা সীমানাবর্তী নয়াগ্রামের নিগুই থেকে গাড়ি ভাড়া করে এসেছিলেন আদিবাসী গানের দলের ১২ জন সদস্য। দলনেত্রী ভারতী সরেন বলেন, “এসে শুনছি পুরোটাই গুজব। হয়রানিই সার।”
সকাল ১১টা নাগাদ ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতোর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তারপর লাইন করে লোকশিল্পীরা নথিপত্র জমা দিতে শুরু করেন। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ২০-১৫ হাজার মানুষ এসেছিলেন এ দিন।