চাপানউতোর ছেড়ে তৎপর হল দু’পক্ষ। তিনটি হাতির মৃত্যুর পরে গতিতে রাশ টানল ট্রেন।
রেল-বন চাপানউতোর শুরু হয়েছিল শাবক-সহ তিন হাতি মৃত্যুর পরে। সেই চাপানউতোর পর্ব মিটিয়ে শুরু হয় তৎপরতা। ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রেলকে সতর্কবার্তা দেয় ঝাড়গ্রাম বন বিভাগ। খড়্গপুরের খেমাশুলি থেকে ঝাড়গ্রামের বাঁশতলা, ঝাড়গ্রাম, গিধনি হয়ে ঝাড়খণ্ড সীমানা পর্যন্ত ৪৬ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়। ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলেইচ্চি বলেন, “বুধবার খড়্গপুর রেল ডিভিশনের কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বলা হয়েছে। হাতির গতিবিধি নজরদারি করার জন্য কিছু পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য বিভাগীয় স্তরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” বন দফতরের অনুরোধ পেয়েই তৎপর হয় রেলও। কমানো হয় ট্রেনের গতি।
খড়্গপুর রেল ডিভিশনের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার কুলদীপ তিওয়ারি বলেন, “রেলের সতর্ক বার্তা পেয়ে আপাতত ওই সব জঙ্গল এলাকা দিয়ে ৪০ কিমি গতিবেগে ট্রেন চালানো হচ্ছে। বন দফতরের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বন্যপ্রাণের স্বার্থে সব দিক খতিয়ে দেখে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ করা হবে।”
পরিবেশকর্মীদেরও বক্তব্য, হাতির যাতায়াতের জঙ্গল লাগোয়া রেলপথে কেবলমাত্র ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা পরিবেশ কর্মী তোতা সাঁতরাপৈড়া, মৃণ্ময় সিংহদের মতে, খড়্গপুর-টাটা শাখার জঙ্গল-লাগোয়া রেলপথ দিয়ে দূরপাল্লার বহু দ্রুত গামী ট্রেন চলে। ট্রেনের গতি বেঁধে দিলেই দুর্ঘটনা হবে না, এটা ঠিক নয়। কম গতির ট্রেনের ধাক্কাতেও হাতির মৃত্যুর নজির রয়েছে এদেশে। তোতাদেবী বলেন, “হাতিদের বিচরণ ক্ষেত্রে রেল পথ, সড়ক ও লোকালয় গড়ে উঠেছে। তাই হাতির গতিবিধি নিয়ে রেল ও বন দফতরের মধ্যে সমন্বয় রাখাটা খুবই জরুরি। না হলে আগামী দিনে এভাবে আরও বন্যপ্রাণের জীবন সংশয়ের আশঙ্কা রয়েছে।” হাতির করিডরগুলিতে পর্যাপ্ত ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করে নিয়মিত নজরদারির দাবি করেছেন পরিবেশ কর্মীরা।
সোমবার গভীর রাতে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টাটা-খড়্গপুর শাখার গিধনি ও কানিমহুলি স্টেশনের মাঝে রেল লাইন পেরোনোর সময় মুম্বই গামী জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের ধাক্কায় শাবক সমেত তিনটি হাতির মৃত্যু হয়। জামবনির ডুমুরিয়া গ্রামের কাছে ওই ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনার পরে রেল প্রশাসন ও বন দফতরের মধ্যে চাপান উতোর শুরু হয়। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিমি। কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, বন দফতরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সর্বনিম্ন ৩০ থেকে ৪০ কিমি গতিতে তখন জঙ্গল এলাকা দিয়ে ট্রেন যাতায়াত করে। রেল সূত্রের দাবি, গত জুন মাসের পরে বন দফতরের তরফে রেল লাইন লাগোয়া জঙ্গলে হাতি থাকার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে বন দফতরের বক্তব্য, ডুমুরিয়ার ওই এলাকায় আগে কখনও হাতি রেল লাইন পার হওয়ার চেষ্টা করেনি। সেই কারণেই আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।