দিশাহারা বন দফতর

হাতি তাড়াতে ঠান্ডায় রাত পাহারা

সন্ধে নামলেই জঙ্গল থেকে বেরোচ্ছে হাতির দল। দাঁতালের তাণ্ডবে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। ঠান্ডা উপেক্ষা করে তাই শীতের রাতেও পাহারা দিচ্ছে গ্রামবাসী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩২
Share:

সন্ধে নামলেই জঙ্গল থেকে বেরোচ্ছে হাতির দল। দাঁতালের তাণ্ডবে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। ঠান্ডা উপেক্ষা করে তাই শীতের রাতেও পাহারা দিচ্ছে গ্রামবাসী।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা-সহ চার-পাঁচটি ব্লকের প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশটি গ্রামে মাস কয়েক ধরে তাণ্ডব চালাচ্ছে দাঁতালের দল। সারাদিন বিশেষ দেখা না মিললেও অন্ধকার হলেই ফসলের খেতে নেমে পড়ছে হাতিরা। দিশাহারা বন দফতরও। দফতরের মেদিনীপুর বিভাগ ও রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা ও অর্ণব সেনগুপ্ত বলেন, “হাতির পালকে কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না। হাতির অত্যাচারে ফসলের ক্ষতির বহর বেড়েই চলছে। এ বার তাই গ্রামবাসীরা রাত জেগে ফসল রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছেন। তবে আমরাও হাল ছাড়িনি।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, অনেক চেষ্টা করেও বন দফতর হাতির পালকে ঠেকাতে পারেনি। বাধ্য হয়ে তাই নিজেদেরই পটকা ফাটিয়ে ও হুলা জ্বালিয়ে রাত পাহারার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। বন দফতর সূত্রে খবর, হাতির দল তিনটি দলে ভাগ হয়ে গিয়েছে। যদিও দলের বেশিরভাগ হাতি এখন চন্দ্রকোনার ধামকুড়িয়া জঙ্গলেই ঘোরাফেরা করছে। গত বছর ডিসেম্বর মাসের গোড়ায় দলমার প্রায় ১৪০টি হাতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ঢোকে। পরে তারা একাধিক ভাগে ভাগ হয়ে বিভিন্ন জঙ্গলে চলে যায়। গড়বেতার ধাদিকা রেঞ্জ, আঁধরনয়ন রেঞ্জের পানশিউলি জঙ্গল, আমলাগোড়া রেঞ্জ ও গোয়ালতোড় এলাকার বিভিন্ন জঙ্গলেও হাতির দল ঘুরছে।

Advertisement

পানশিউলি জঙ্গলে থাকা হাতির দল রবিবার রাতে স্থানীয় কয়েকটি গ্রামে তাণ্ডব চালায়। ধামকুড়িয়া জঙ্গল লাগোয়া চন্দ্রকোনার অধোয্যা, শোলাগেড়িয়া, ধরমপুর-সহ একাধিক গ্রামেও দাঁতালের দাপটে ত্রাহি রব। বন দফতরের এক সূত্রে খবর, গত এক মাসে হাতির তাণ্ডবে জেলার চারটি ব্লকের প্রায় আটশো একর জমির আলু ও শাকসব্জির ক্ষতি হয়েছে। বেসরকারি সূত্রের হিসেব অনুযায়ী, ক্ষতির বহর আরও বেশি। একাধিক বাড়িও ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে হাতি। নষ্ট হয়েছে বেশ কয়েকটি রাস্তাও। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, এলাকা থেকে হাতির পালকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বন দফতরের কাছে দাবি জানাচ্ছি। হাতির তাণ্ডবে ফের ক্ষতি হলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন স্থানীয়দের একাংশ।

গড়বেতার নরহরিপুর গ্রামের সুশান্ত পাল, চন্দ্রকোনা রোডের সোনারবেড় গ্রামের অশোক ঘোষ, ধামকুড়িয়ার সোমনাথ সাঁতরাদের অভিযোগ, ‘‘পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের জেরে সিংহভাগ চাষি ধার করে আলু বীজ, সার কিনে চাষ করেছিলেন। কিন্তু হাতিই সব শেষ করে দিল। এ বার কী ভাবে দেনা শোধ করব, জানি না। বন দফতরেরও হুঁশ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন