ধৃত: সিআইডির জালে অভিযুক্ত সঞ্জয়। বৃহস্পতিবার হলদিয়া মহাকুমা আদালতের পথে। —নিজস্ব চিত্র।
ভুয়ো নথিপত্র দিয়ে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় দু’কোটি টাকা ঋণ নিয়ে প্রতারণার মামলায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল সিআইডি। সঞ্জয় বেরা নামে ওই যুবককে বুধবার রাতে হলদিয়ার মঞ্জুশ্রী থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বাড়ি হাওড়ার বাগনানে। বৃহস্পতিবার ধৃতকে হলদিয়া মহকুমা আদালতে হাজির করে ৭ দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি।
প্রতারণার মামলাটি পাঁচ বছরের পুরনো। এ নিয়ে বিশদে কিছু বলতে চাননি কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান, রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছরের পুরনো মামলা এটা। বর্তমানে বিষয়টি বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করব না।’’ তবে মামলার সরকারি আইনজীবী বিজয়কুমার রাম জানান, ওই যুবকের বিরুদ্ধে ভুয়ো নথিপত্র দিয়ে ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালে সঞ্জয় ও তাঁর কয়েক জন সঙ্গী একাধিক লরি-ট্রাক কেনার জন্য ঋণ চেয়ে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নন্দীগ্রাম শাখায় নথিপত্র জমা দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ১ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তাঁরা। একা সঞ্জয়ই ঋণ নিয়েছেন ৪৮ লক্ষ টাকা। প্রথমে দু’টো গাড়ির জন্য ৪১.৮৫ লক্ষ এবং পরে আরও একটি গাড়ির জন্য ৫.৯৭ লক্ষ টাকা ঋণ নেন তিনি। কিন্তু সঞ্জয় বা তাঁর সঙ্গীদের কেউই ঋণের টাকা শোধ করেননি। কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে ওই ঋণ খেলাপিদের একাধিকবার নোটিস দিয়েও লাভ হয়নি।
এরপর কাঁথি সমবায় কর্তৃপক্ষ নিজেরাই তদন্তে নামেন। প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, সঞ্জয় এবং তাঁর বাগনানে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার ভুয়ো অ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবহার করে এই জালিয়াতি করেছেন। এর সঙ্গে বড়সড় প্রতারণা চক্রের যোগ রয়েছে বুঝেই কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সিআইডি তদন্তের সুপারিশ করেন। তদন্তে নেমে সিআইডি আগেই বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে এতদিন মূল অভিযুক্ত সঞ্জয়ের নাগাল পায়নি সিআইডি।
হাওড়ার বাগনানের বীরকূলে বাড়ি সঞ্জয়ের। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে পাওয়া গেল দিদি জয়া দাসকে। তিনি জানালেন, ১০ চাকার ট্রাক কিনে বিভিন্ন সংস্থায় ভাড়া খাটাতেন সঞ্জয়। সঞ্জয় বিবাহিত, কন্যাসন্তান আছে। বাবা বলাই বেরা ফুলের ব্যবসায় আগ্রহ ছিল না সঞ্জয়ের। তিনি ছুটতেন টাকার পিছনে। জয়ার কথায়, ‘‘শেষের দিকে বুঝতাম ভাই ফেঁসে গিয়েছে।’’ জয়া আরও জানান, পুলিশে অভিযোগের পর থেকে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান সঞ্জয়। শেষ রক্ষা অবশ্য হল না।