শহরেও নিখরচায় গ্যাস সংযোগ পাবেন গরিবরা

শুধু গ্রাম নয়, এ বার থেকে রান্নার গ্যাস সংযোগ নিখরচায় পাবে শহুরে বিপিএল-ভুক্ত পরিবারও। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস সংস্থাগুলির সামাজিক দায়িত্বপালন প্রকল্পের (সি এস আর) তহবিল থেকে মেটানো হবে এর খরচ। ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ জন্য আবেদন করা যাবে। পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস মন্ত্রক সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-এর ২৬ এপ্রিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী পি লক্ষ্মী লোকসভায় লিখিত বিবৃতিতে জানান, গ্রামীণ এলাকায় বিপিএল পরিবারের জন্য বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র।

Advertisement

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০১:১৬
Share:

শুধু গ্রাম নয়, এ বার থেকে রান্নার গ্যাস সংযোগ নিখরচায় পাবে শহুরে বিপিএল-ভুক্ত পরিবারও। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস সংস্থাগুলির সামাজিক দায়িত্বপালন প্রকল্পের (সি এস আর) তহবিল থেকে মেটানো হবে এর খরচ। ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ জন্য আবেদন করা যাবে।

Advertisement

পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস মন্ত্রক সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-এর ২৬ এপ্রিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী পি লক্ষ্মী লোকসভায় লিখিত বিবৃতিতে জানান, গ্রামীণ এলাকায় বিপিএল পরিবারের জন্য বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র। ‘রাজীব গাঁধী গ্রামীণ এলপিজি বিতরক যোজনা’র মাধ্যমে সেই কাজ হবে। এই প্রকল্পটিতে গ্রামের বিপিএল তালিকা-ভুক্তদের সিলিন্ডারের জন্য কোনও টাকা জমা রাখতে হবে না। দিতে হবে না ‘প্রেসার রেগুলেটর’ কেনার অর্থও। তবে ওভেন কেনা-সহ আনুষঙ্গিক কিছু খরচ বহন করতে হয়। এই প্রকল্পে গ্রামের বহু পরিবার গ্যাস সংযোগ পেয়েছে। শহরের বিপিএল পরিবারগুলি এই সুবিধা পেত না। কেন্দ্রীয় সরকার তা শহর এলাকাতেও ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩১ মার্চ পর্যন্ত শহুরে বিপিএল পরিবার এই সুবিধা চেয়ে স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে আবেদন করতে পারেন। সেই সঙ্গে জমা দিতে হবে বিপিএল কার্ডের প্রতিলিপি। এরপর ডিস্ট্রিবিউটর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বিপিএল কার্ডের বৈধতা নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরেই গ্যাসের সংযোগ দিয়ে দেবে। এখন সাধারণ সংযোগের ক্ষেত্রে সিলিন্ডার প্রতি জমা রাখতে হয় ১৪৫০ টাকা। প্রেসার রেগুলেটরের জন্য দিতে হয় আরও দেড়শো টাকা। প্রতি বিপিএল পরিবারের সাশ্রয় হবে ১৬০০ টাকা। এর পর সরকারি ভর্তুকির সিলিন্ডার কিনতে হবে নির্দিষ্ট দামেই।

Advertisement

তবে এখনও পর্যন্ত এই সংযোগ চেয়ে কত আবেদন জমা পড়েছে, তা জানাতে পারেনি গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থাগুলি। তারা জানিয়েছে যে, এখন আবেদন জমা পড়ছে। ৩১ মার্চের পরে ডিস্ট্রিবিউটরা সেই সব আবেদন সংস্থায় পাঠাবে। তখনই এই ব্যাপারে বিশদ তথ্য পাওয়া যাবে। বেশ কয়েক জন ডিস্ট্রিবিউটরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এ ব্যাপারে উৎসাহ আছে মানুষের মধ্যে। দুর্গাপুর বি-জোনের ডিস্ট্রিবিউটর অরূপ মণ্ডলের কথায়, “বস্তি এলাকার অনেকে খোঁজ নিয়েছেন। কেউ কেউ ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়েছেন।” গ্যাস সংযোগ পেলে তাঁদেরও সমস্যা মিটবে বলে মনে করছে শহরের বহু গরিব পরিবার। দুর্গাপুরের আইনস্টাইন রোড লাগোয়া বস্তির বাসিন্দা প্রণতি সাউ, বিনয় দাসেরা বলেন, “আমরা সবাই দিন আনি দিন খাই। এককালীন টাকা জোগাড় করা কঠিন। কাঠ বা কয়লার জ্বালানিতে নানা সমস্যা। গ্যাস পেলে খুবই সুবিধে হয়।”

ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন (হু) -এর ২০১৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় তিন বিলিয়ন বাড়িতে রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ, ঘুঁটে, কয়লা ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশই দুঃস্থ পরিবার। রান্নাঘর নিচু, আলো-বাতাস ঢোকে না। ধোঁয়া বেরোনোর তেমন ব্যবস্থা নেই। এর ফলে সহনীয় মাত্রার বহু গুণ বেশি দূষিত হয় রান্না ঘরের ভিতরের বাতাস। তাতে শ্বাস কষ্ট, হৃদরোগসহ নানা সমস্যা হয়। ওই সব জ্বালানির পরিমাণ কমছে। গ্যাসে রান্না হলে পরিবেশ দূষণ সার্বিক কমে। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস সংস্থাগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি গ্রাহক রয়েছেন ইন্ডিয়ান অয়েলের। এ রাজ্যে সংস্থার এরিয়া কার্যালয় আছে দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি ও কলকাতায়। দুর্গাপুরের মুখ্য এরিয়া ম্যানেজার ডি মুরলি বলেন, “প্রথাগত জ্বালানি ব্যবহারে বিপাকে পড়তে হয় মহিলাদের। আমরা চাই সব পরিবারে গ্যাসের সংযোগ পৌঁছক। বিপিএল পরিবারগুলি নতুন প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারলে গ্রাহক সংখ্যাও এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন