টোটো চালকদের উদ্যোগ

জলমগ্ন শহরে বিনামূল্য পরিষেবা

বাজার টানতে মূল্য ছাড়ের অস্ত্র দীর্ঘদিন ধরে শানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদ্বন্দ্বীকে টেক্কা দিতে ক্রেতাকে লাভ ছেড়ে ব্যবসা করতেও দেখা যায়। এতে নাকি ব্যবসায়ীর ‘গুড উইল’ বাড়ে। জলমগ্ন ঘাটালে জনপ্রিয়তা বাড়াতে সেই পথই বাছলেন টোটো চালকরা। সোমবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শহরের সমস্ত যাত্রীকে তাঁরা গন্তব্যে পৌঁছে দিলেন বিনামূল্যে। যদিও এই কাজকে একেবারেই ব্যবসার অঙ্গ বলে মানতে নারাজ টোটো মালিকরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দ্রকোনা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০০:৫৫
Share:

টোটোয় ওঠার অপেক্ষায়। — নিজস্ব চিত্র।

বাজার টানতে মূল্য ছাড়ের অস্ত্র দীর্ঘদিন ধরে শানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদ্বন্দ্বীকে টেক্কা দিতে ক্রেতাকে লাভ ছেড়ে ব্যবসা করতেও দেখা যায়। এতে নাকি ব্যবসায়ীর ‘গুড উইল’ বাড়ে। জলমগ্ন ঘাটালে জনপ্রিয়তা বাড়াতে সেই পথই বাছলেন টোটো চালকরা।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শহরের সমস্ত যাত্রীকে তাঁরা গন্তব্যে পৌঁছে দিলেন বিনামূল্যে। যদিও এই কাজকে একেবারেই ব্যবসার অঙ্গ বলে মানতে নারাজ টোটো মালিকরা। বরং তাঁরা জানিয়েছেন, এটা নিতান্তই ত্রাণ। আলাদা করে ত্রাণ বিলি না-করে নিজেরদের একদিনের রোজগার তাঁরা তুলে দিলেন দুর্গত মানুষের জন্য।
ঘাটাল শহরের দু’নম্বর চাতালে এখনও জল জমে রয়েছে। বাস চলাচল বন্ধ। অগত্যা নৌকাই ভরসা। কিন্তু দু’নম্বর চাতালে নেমে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে গেলে তবে পাওয়া যাচ্ছে বাস। ১০ দিন পর এ দিন সকাল থেকে ঘাটাল-মেদিনীপুর (ভায়া নাড়াজোল) রুটে বাস চলাচল শুরু হয়েছে।
ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়কে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ বাস চলাচল করে। ফলে গত কয়েকদিনে বিপুল সংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করেছেন নৌকায়। গত শুক্রবার থেকে জলস্তর কিছুটা কমে যাওয়ায় তিন নম্বর চাতাল পর্যন্ত বাস আসতে পারছে। তবে তিন-চার দিন আগেও দু’নম্বর চাতাল থেকে একেবারে ঘাটাল শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে রানির বাজার পর্যন্ত নৌকাই ছিল ভরসা।
দু’নম্বর চাতাল থেকে বাসস্ট্যন্ড পর্যন্ত অবশ্য টোটো বা অটো চলাচল করছিল। বন্যা পরিস্থিতিতে রবিবার রাতে বৈঠক করেন টোটো মালিকরা। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছিল তাঁরা অর্থ তুলে দেবেন ত্রাণ তহবিলে। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত বদলে যায়। সংগঠনের পক্ষে সুশান্ত জানা বলেন, “আমরা রবিবারই ঠিক করি যাত্রীদের জন্য একদিন নিখরচায় যাত্রীদের গন্তব্য পৌঁছে দেব। বিষয়টি পুর প্রধানকেও জানাই।” মহকুমা শাসক রাজনবীর সিংহ কপূর বলেন, “টোটো মালিকদের এই উদ্যোগ খুব ভাল। এই সময় সকলেই সামর্থ মতো সাহায্য করতে পারলে দুর্গতরা উপকৃত হবেন।’’

Advertisement

এক দিনের জন্য হলেও পরিষেবা পেয়ে খুশি ঘাটালের বাসিন্দারাও। ঘাটাল থেকে প্রতিদিনই কাজের জন্য চন্দ্রকোনায় যেতে হয় স্কুল শিক্ষক সমিত ঘোষকে। তিনি বলেন, ‘‘এই ক’দিন নৌকা ভাড়ার দাপটে জেরবার হয়েছি। অটোও প্রায় পাওয়াই যায়নি। ফলে টোটোই ভরসা ছিল। আজ ওরা বিনা ভাড়ায় নিয়ে গেল। মানুষের খানিকটা তো উপকার হলই।’’ প্রায় একই কথা বলেন ক্ষীরপাইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে নার্স দীপালি মজুমদার। দীপালিদেবী বলেন, ‘‘একদিনের ভাড়া বাঁচিয়ে আমাদের কতটা লাভ হল জানি না। কিন্তু টোটো চালকদের সৎ-প্রচেষ্টার প্রশংসা না করে পারছি না। ভালই লাগল।’’ সামান্য বৃষ্টিতে জল জমলে যেখানে সব কিছুর দাম বেড়ে যায়, সেখানে টোটো চালকদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করছেন সবাই। জানা গিয়েছে শহরে মোট ৪০ টি টোটো চলাচল করে। প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি এক থেকে দেড় হাজার টাকা প্রত্যেকেরই রোজগার হয় বলে জানিয়েছেন চালকরা। এ দিন সব টোটোই বিনামূল্যে যাত্রী পরিবহণ করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন