ছ’বছর স্কুলেই কলেজ

স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০১০ সালে কোলাঘাটে একটি ডিগ্রি কলেজের অনুমোদন দেয় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share:

স্কুলের এই ভবনেই চলে কলেজের ক্লাস। নিজস্ব চিত্র

কলেজ চলছে আট-ন’বছর ধরে। পড়ানো হয় আটটি বিষয়। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও কম নয়— প্রায় ১২০০। কিন্তু এতগুলি বিষয় এবং এত ছাত্রছাত্রীর জন্য পড়ার সময় বরাদ্দ মেরে কেটে চার ঘণ্টা। কারণ, কলেজের নেই কোনও নিজস্ব ভবন। স্কুলের ভবনে ভরসা করে কাকভোর থেকে চলে ক্লাস। স্কুল শুরুর আগেই শেষ করতে হয় কলেজের পঠনপাঠন। এ নিয়েই সমস্যায় কোলাঘাট রবীন্দ্রভারতী মহাবিদ্যালয়।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০১০ সালে কোলাঘাটে একটি ডিগ্রি কলেজের অনুমোদন দেয় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। ২০১১ সালের মার্চ মাসে কোলাঘাটে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে এক ব্যক্তির বাড়িতে প্রথমে শুরু হয়েছিল কোলাঘাট রবীন্দ্রভারতী মহাবিদ্যালয়ের ক্লাস। দু’বছর পরে ২০১৩ সালের মার্চে কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলে স্থানান্তর হয় ওই কলেজ। প্রত্যেকদিন সকাল থেকে হাইস্কুল ভবনেই চলে কলেজের পঠনপাঠন। সকাল ১০টার দিকে স্কুল শুরুর আগে শেষ হয় কলেজ। কিন্তু এত বছরেও কলেজ তৈরির জন্য কোনও জমি বরাদ্দ বা ভবন তৈরি করা যায়নি বলে অভিযোগ। এতে সমস্যায় পড়েছেন দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ওই কলেজের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, কলেজ ভবন নির্মাণের জন্য কোলাঘাটের পানসিলা এলাকায় ভূমি দফতর প্রায় পাঁচ একর জমি কলেজের নামে দিতে চেয়ে উচ্চ শিক্ষা দফতরে আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু এখনও মন্ত্রিসভায় তার অনুমোদন না মেলায় ওই জমির দখল নিতে পারছেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ। নিজস্ব ভবন না থাকার জন্য কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা যায়নি। কারণ, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য নিজস্ব ল্যাবরেটারি দরকার হয়। বর্তমানে ভূগোল বিষয়ের প্রাকটিক্যাল করতে সংশ্লিষ্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মহিষাদল রাজ কলেজে যেতে হয় বলে কলেজ সূত্রে খবর। তবে সম্প্রতি মাহিষাদল রাজ কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের কলেজে ওই সুবিধার আর দিতে পারবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

মাত্র সকাল ১০টা পর্যন্ত ক্লাসের সময় হওয়ায় প্রতিদিন সমস্ত ক্লাসও করা যায় না রবীন্দ্রভারতী মহাবিদ্যালয়। এতে ক্ষতি হচ্ছে পড়ুয়াদেরই। এছাড়া ওই কলেজের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বহু আবেদনের পরেও কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ফলে বিভিন্ন সরকারি সুবিধে থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে কলেজ। কলেজের অধ্যক্ষ তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলেজের নিজস্ব ভবন না থাকায় অল্প সময়ে যেমন সমস্ত ক্লাস করা যায় না, তেমনই পরিকাঠামোর অভাবে মার কাছে আধুনিক শিক্ষার বিভিন্ন সুবিধা সুযোগ।’’

এদিকে, স্কুলে কলেজের ক্লাস নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষও। কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রথমে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান যে, তিন বছরের মধ্যে কলেজের নিজস্ব ভবন তৈরি করে ক্লাস স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু নতুন ভবন তো দূরের কথা, এখনও ভবন নির্মাণের জায়গার রেজিস্ট্রেশনই হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রত্যেকদিন স্কুল শুরুর সময় কলেজের অনেক ছাত্রছাত্রী ক্লাস দখল করে বসে থাকেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারস্বরে বাজানো হয় সাউন্ড বক্স। কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় গোলমালের জেরে স্কুল পড়ুয়ারা আতঙ্কিত হন বলে অভিযোগ।

কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্কুলে কলেজের ক্লাস শুরু হওয়ার আগে কলেজ কর্তৃপক্ষকে আমরা যেসব শর্ত দিয়েছিলাম, সময় গোড়ানোর সাথে সাথে কলেজ কর্তৃপক্ষ সমস্ত শর্তই লঙ্ঘন করেছেন। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব সরকার স্কুল থেকে কলেজটিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাক।’’

স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ্য বলেন, ‘‘কলেজ চালানোর সময় খুবই অল্প। পড়ুয়ারা অল্প সময়ই ওখানে থাকতে পারেন। ওই অভিযোগ সত্যি নয়।’’ আর কলেজের জমি প্রসঙ্গে কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি সন্দীপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা বহুবার আবেদন জানিয়েও এখনও জমি হাতে পাইনি। জানি না কতদিন এভাবে চালাতে পারব।’’ এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মধুরিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘কলেজের ভবন নির্মাণে দ্রুত জায়গার অনুমোদন পেতে প্রয়োজনে শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি লিখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন