হতশ্রী গ্রামে নেই বিদ্যাসাগরের স্মৃতিরক্ষার তাগিদ

চলতি বছর বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষের জন্মজয়ন্তী। সে জন্য উৎসবের রূপরেখা তৈরি করছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০০:১৮
Share:

বীরসিংহ গ্রামের রাস্তা এখনও কাঁচা। নিজস্ব চিত্র

এ গ্রামের নামেই তার পরিচয়। নামের সঙ্গে জুড়ে ইতিহাস, ঐতিহ্য। তবে তা রক্ষায় যত্ন কই!

Advertisement

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের গ্রাম বীরসিংহের সঙ্গে আর পাঁচটা গ্রামের বিশেষ ফারাক নেই। সাধারণ পর্যটক হন বা গবেষক, গ্রাম ঘুরে এমন আক্ষেপ সকলেরই। রাস্তা, পরিবহণ, খেলার মাঠ, পার্কের মতো সাধারণ পরিষেবাও এখানে উপেক্ষিত। আর সিংহশিশুর ভিটেমাটি সংরক্ষণ হোক বা সংগ্রহশালার যত্ন, সে সব তো তিমিরেই।

চলতি বছর বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষের জন্মজয়ন্তী। সে জন্য উৎসবের রূপরেখা তৈরি করছে রাজ্য সরকার। গুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা কমিটি। আয়োজনে উদ্যোগী বিদ্যাসাগর বিশ্বববিদ্যালয়ও। আজ, বিদ্যাসাগরের মৃত্যুদিন। ঘাটাল মহকুমা বিদ্যাসাগর দ্বিশতজন্মবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটি ও বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা কমিটি পৃথক ভাবে অনুষ্ঠান করবে। কিন্তু এই স্মরণে বীরসিংহের কি আদৌ হাল ফিরবে— প্রশ্ন ঘুরছে গ্রামের আনাচেকানাচেই।

Advertisement

গ্রামবাসীই মনে করিয়ে দিলেন, বাম আমলের গোড়ার বছরগুলি বিদ্যাসাগর স্মরণে দেদার আয়োজন ছিল। ঘটা করে বসত মেলা। হাজির তাবড় নেতা-মন্ত্রীরা। বাসস্ট্যান্ড, গেস্ট হাউস তৈরির পরিকল্প না শুরু তখন থেকেই। তবে তার সুফল পায়নি বীরসিংহের গ্রাম। বাম ঘুরে তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় দফাতেও বাসস্ট্যান্ড চালু হয়নি। আর গেস্ট হাউস বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে।

বস্তুত, বীরসিংহের উন্নয়নে সার্বিক কোনও পরিকল্পনাই নেওয়া হয়নি। বিক্ষিপ্ত কিছু ভাবনা মাঝেমধ্যে সামনে এসেছে। পরে তা মিলিয়েও গিয়েছে। বীরসিংহ ঘুরলেই দেখা যায়, বিদ্যাসাগরের স্মৃতি মন্দিরের পিছনের রাস্তা এখনও কাঁচে। সন্ধে নামলেই গোটা এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। যে মানুষটা জীবন বদলানোর মন্ত্র শিখিয়ে গিয়েছেন, তাঁর গ্রামেই বদলায়নি আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি। অধিকাংশ বাড়ি এখনও মাটির। সব বাড়িতে শৌচাগারও নেই। বিদ্যাসাগরের স্মৃতি রক্ষারও বালাই নেই সে ভাবে। নেই কোনও তোরণ, নাম ফলক কিংবা পথ নির্দেশক বোর্ড। লোকে বলে না দিলে জানার উপায়ই নেই ইতিহাস পুরুষের জন্মভিটে কোন দিকে।

ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই নানা প্রতিশ্রুতির কথা শোনাচ্ছেন। জানাচ্ছেন, এখানে একটি মহিলা কলেজ, গবেষণাগার, অথিতি নিবাস, পার্ক, পথবাতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও বাসস্ট্যান্ডের সংস্কারের ভাবনা রয়েছে। বীরসিংহের সঙ্গে হুগলির যোগাযোগস্থাপনকারী রাস্তা সম্প্রসারণ, তোরণ লাগিয়ে এলাকাটি পযর্টনস্থল হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও শোনা যাচ্ছে স্থানীয় বিধায়কের মুখে। শঙ্করের কথায়, “ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দির ও ভগবতী বিদ্যালয়কে হেরিটেজ ঘোষণা করেছেন। বাকি পরিকল্পনাগুলি রূপায়ণ করা নিয়েও চিন্তাভাবনা হচ্ছে। ভাল কিছুই হবে।”

কিন্তু এত দিনেও কেন বীরসিংহের শ্রী ফেরেনি, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গবেষক বললেন, “অনেক আশা নিয়ে বীরসিংহে গিয়েছিলাম। দেখলাম পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে বিদ্যাসাগরের ব্যবহৃত জিনিস, কিছুই ঠিকঠাক ভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। খুবই হতাশ হয়েছি।” ঘটনা যে সত্যি তা মনছেন বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা কমিটির সম্পাদক তথা ভগবতী বিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ শক্তিপদ বেরাও। তিনি বলেন, “আমরাও আমাদের দাবিদাওয়া জানিয়েছি। আশা করি এ বার সে সব ফলপ্রসূ হবে।”

বিদ্যাসাগরের জন্মের দু’শোর বছর ঘিরেই নতুন করে আশার আলো দেখছে তাঁর গ্রাম। প্রশাসনের সূত্রে খবর, দু’শো বছরের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে আসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই হয়তো সার্বিক উন্নয়নের ঘোষণা করবেন। গ্রামবাসীর মতে, “গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা হলেই বিদ্যাসাগরের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো সম্ভব।”

আপাতত সেই আশাতেই দিন গুনছে বীরসিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন