রাতে চালানোর জন্য পরিবহণ দেওয়া । নিজস্ব চিত্র
কাজে বেরোনো মানুষজন সন্ধ্যা হয়ে গেলেই প্রমাদ গোনেন। চুরি-ছিনতাই বা অন্য উপদ্রবের চেয়েও তাঁদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন সেই চিন্তা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুশ্চিন্তা বাড়ে বাড়ির লোকজনেরও। ঘরের মানুষটা বা ছেলে-মেয়েটা কখন ফিরবে তা ভেবেই অস্থির হয়ে ওঠে পরিবার।
কোনও গণ্ডগ্রামের নয়, দিনের পর দিন এই সমস্যায় জর্জরিত রাজ্যের শিল্পনগরী হলদিয়ার নাগরিকেরা। রাজ্যে শিল্পের অন্যতম মুখ হলদিয়া হলেও সেখানকার পরিবহণ পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ শুরু থেকেই। রাজ্যে সরকার বদলের পরে ছবিটা বদলের আশা করেছিলেন এখানকার মানুষ। কিন্তু সেই আশা ব্যর্থ করে এখনও অন্ধকার নামার সঙ্গে সঙ্গেই শিল্পনিগরীর রাস্তা থেকে উধাও হয় বাস। শুধু বেসরকারি নয়, সরকারী বাস পরিষেবার ছবিটাও এক। ফলে কাজ থেকে বা স্কুল-কলেজ থেকে ফিরতে সন্ধ্যে নামলেই দুর্ভোগের সীমা থাকে না। যা নিয়ে নানা সময় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে। কিন্তু তাতেও অবস্থার পরিবর্তন নেই। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, দিনের বেলায় যে বাস পরিষেবা বহাল থাকে, রাতে কোন কারণে তা অদৃশ্য হয়ে যায়? এলাকার মানুষের দাবি, হলদিয়া-মেচেদা (ভায়া নন্দকুমার), টাউনশিপ-মেচেদা (ভায়া দুর্গাচক) প্রভৃতি রুটে সন্ধ্যের পর আর মেলে না বাস।
বহু পুরনো এই সমস্যার সুরাহা করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী ও হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের (এইচডিএ) চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী। গত বছর শিল্পনগরীর বাসিন্দাদের জন্য রাতের বাস পরিষেবা চালু করার ব্যবস্থা নেন। এর রাজ্য সরকারের তরফে দুটি বাস দেওয়া হয়েছিল হলদিয়া পুরসভাকে। ঠিক ছিল তারাই সেগুলি চালাবে। কিন্তু অভিযোগ, চালু হওয়ার মাস খানেক পরেই রাতের ওই বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। দু’টি বাসের একটি ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে ব্রজলালচকের হলদিয়া গেটের পাশে এবং অপরটি চৈতন্যপুরে দাঁড়িয়ে থাকে।
চালুর পরেও কেন বন্ধ করে দেওয়া হল পরিষেবা?
হলদিয়া পুরসভা সূত্রে খবর, বাস চালানোর জন্য স্থানীয় দু’টি এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দু’টি গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচের বহর বাড়তে থাকায় তারা বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি। তা ছাড়া বেতন কম হওয়ার জন্য উপযুক্ত চালক মেলেনি। প্রতীম মাইতি নামে এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী জানান, হলদিয়ায় দিনের বেলায় বাস পরিষেবা যতটা স্বাভাবিক থাকে, রাতে ঠিক তার উল্টো। বাস না পেলে বিভিন্ন গাড়িতে নন্দকুমার পর্যন্ত পৌঁছতে হয়। প্রতীমবাবুর মতো অভিজ্ঞাতা প্রায় সকলেরই। এ বিষয়ে শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁকে পাওয়া য়ায়নি। এসএমএস করা হলেও জবাব দেননি।
পুরসভার চেয়ারম্যান শ্যামল আদক অবশ্য রাতে বাস না থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘রাতের বাস পরিষেবা স্বাভাবিকই আছে। যে দু’টি বাস চালানো হতো সেগুলি পুরনো। বিকল্প বাস পাওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।’’ একই দাবি, আইএনটিটিইউসির জেলা কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকারেরও। তিনি বলেন, ‘‘কেউ কেউ হয়তো বাসের সময়সূচী জানেন না। তাই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।’’