প্রতীক্ষা: সোমবার আদ্রা স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
দুর্ভোগের শুরু হয়েছিল সকাল থেকেই। যার শেষ হল গভীর রাতে।
অলচিকি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ ও সাঁওতালি ভাষাকে সরকারি কাজে অন্তর্ভুক্ত করা-সহ একাধিক দাবিতে সোমবার সকাল থেকে টানা প্রায় ২০ ঘণ্টা জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধে চরম দুর্ভোগের শিকার হাজার হাজার মানুষ গভীর রাতে যান চলাচল শুরু হওয়ায় হাঁপ ছাড়েন।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার মেচগ্রাম বাজারের কাছে হাওড়া থেকে মুম্বইগামী ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ও পাঁশকুড়া-ঘাটাল রাজ্য সড়কের সংযোগস্থলে অবরোধ চালায় ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের সদস্য-সমর্থকরা। সোমবার সকাল ৬টা থেকে অবরোধের জেরে আটকে পড়ে ওই দুই সড়কে যাতায়াতকারী সমস্ত যানবাহন। ফলে কাজে যোগ দিতে যাওয়া মানুষ থেকে চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে যাওয়া রোগীদের নিয়ে অসুবিধায় পড়েন বহু মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে গাড়িতে আটকে থেকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়গপুর শাখায় খেমাশুলিতে রেললাইনে অবরোধের জেরে ট্রেন চলাচলও ব্যাহত হয়। বহু ট্রেন বাতিল হওয়ায় দুর্ভোগের শেষ ছিল না যাত্রীদের। কলকাতা থেকে বাড়ি ফেরার পথে চরম হয়রানির শিকার হতে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষকে। রাত ১০টা পর ধীরে ধীরে অবরোধ উঠলেও যান ও রেল চলাচল স্বাভাবিক হতে সঙ্গলবার সকাল গড়িয়ে যায়।
এদিন সকালে কলকাতা থেকে চন্দ্রকোনা রুটের বাসে চেপে বাড়ি ফিরেছিলেন দাসপুরের বাসিন্দা সোমনাথ ভুঁইয়া। মেচগ্রামের কিছু আগে তাঁদের বাস সোমবার আটকে ছিল অবরোধে। রাত ১০ টা নাগাদ অবরোধ উঠলে বাস ছাড়ে। দিনভর হয়রানির শিকার সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘সোমবার অবরোধে আটকে পড়ে ভেবেছিলাম কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ অবরোধ তুলে রাস্তা খালি করে দেবে। কিন্তু সারাদিন ধরে পুলিশ রাস্তায় থাকলেও অবরোধ উঠল না। এতক্ষণ ধরে আটকে থাকতে হবে ভাবতে পারিনি। রাতে বাস ছাড়তে মনে হল এ বার হয়তো বাড়ি পৌঁছতে পারব।’’
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাত ১০টা নাগাদ অবরোধ উঠে গেলেও এতক্ষণ পর্যন্ত যানজটের চোটে যা অবস্থা হয় তাতে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে হতে রাত সাড়ে ১২টা বেজে যায়। হাওড়া থেকে খড়্গপুর রুটে লোকাল ট্রেনে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন সবংয়ের বাসিন্দা অনিরুদ্ধ দাস। পাঁশকুড়া স্টেশনের পর ট্রেন না যাওয়ায় বিপাকে পড়ে যান অনিরুদ্ধ-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক বাসিন্দা। সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ পাঁশকুড়া স্টেশনে নেমে তাঁরা অপেক্ষা করেছিলেন। রাতে বালিচক স্টেশনে অবরোধ ওঠার পর রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হলে তাঁরা বাড়ির দিকে রওনা হন।
অনিরুদ্ধ বলেন, ‘‘বালিচক স্টেশনে নেমে বাড়ি যাওয়ার বাস ধরতাম। কিন্তু মাঝপথে আটকে বাড়ি ফিরতে এরকম দুর্ভোগ আগে কখনও পোহাতে হয়নি।’’